বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
Dis_leadLed05জেলাজুড়েবিশেষ প্রতিবেদনসোশ্যাল মিডিয়া

হিংস্রতার দাহ তাপ: ৬৩ দিনে গণপিটুনিতে মৃত্যু ৪

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়’ কথাটা সাহিত্যের পাতায় লিখা থাকলেও বাস্তবে প্রায় সময় তার বিপরিত প্রতিক্রিয়া মিলে। অপরাধির শাস্তি কে না চায়? তার জন্য অবশ্যই শাস্তি কামনা করা উচিৎ, কিন্তু অপরাধীর শাস্তি দিতে গিয়ে নিজে অপরাধে জরানো অসাড় সমতুল্য। এমন ঘটনা ছড়িয়ে পরেছে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। অপরাধের শস্তি দিতে গিয়ে জরিয়ে পরছে আরেক অপরাধে।

বিগত কয়েক মাসে নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি ঘটনার অন্যতম একটি হলো গণপিটুনিতে নিহত। নিষ্ঠুর অমানবিক এই আচরণ হয়ে উঠছে তরুনদের কাছে এক ধরণের বার্তা। হিংস্রতায় বেড়ে উঠছে সমাজের শিশু, কিশোর ও তরুণরা। নারায়ণগঞ্জে ৬৩দিনে পৃথক ঘটনায় গণপিটুনিতে ৪ যুবকের মৃত্যু ও ২জন আহত হয়েছে। অপরাধীদের আইনের কাছে সোর্পদ না করে নিজেরাই তুলে নিচ্ছে আইন। এতে করে হিংস্রতার দাহ তাপ বেড়েই চলছে।

নারায়ণগঞ্জে সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গণপিটুনিতে ৩৬ বছর বয়সী মো. মিলন নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, শুক্রবার স্থানীয় একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গত রোববার রাতে দুইজনকে আটক করে পিটুনি দেয়। পরে পুলিশে সোপর্দ করে তাদের দু’জনকে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দুপুরে লোকজন নিয়ে এলাকায় আসে মিলন। তখন মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসী সেখানে জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। পরে মিলনকে ধরে পিটুনি দেয় আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া গত বছরের ২১ নভেম্বর আড়াইহাজার উপজেলায় খাগকান্দা ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দা এলাকায়, রফিকুল (৩০) ও সোহাগ (২০) নামে দুই ডাকাতকে গণপিটুনী দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ জানায়, ওই দুইজন তাতুয়াকান্দা এলাকায় সন্দেহজনক ভাবে হাতে বেগ হাতে নিয়ে ঘুরা ফেরা করা কালে লোকজন তাদেরকে সন্দেহ করে। তারা তাদেরকে ডেকে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা পালাতে চেষ্টা করে। ওই সময় উত্তেজিত জনতা তাদেরকে আটক করে তাদের সাথে থাকা বেগ তল্লাশী করে বেগে থাকা দুটি বড় ধারালো ছুরি, দুটি ককটেল, ককটেল তৈরীর সরঞ্জাম, শর্টপেন্ট, গেঞ্জি, মুখোশ এ সমস্ত জিনিস উদ্ধার করে। পরে তাদেরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে।

একই বছর ২২ নভেম্বর রাতে নগরীর নিতাইগঞ্জ ঋষিপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে মারা যান নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ‘চিহ্নিত ছিনতাইকারী’ শাহাদাত হোসেন ওরফে হাবু (৩০)। পুলিশ জানায়, রাতে এক ব্যক্তির থেকে ছিনতাইকালে তাকে কয়েকজন আটক করে। এরপর স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ হাবুকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার ২ দিন পর ২৫ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে ফতুল্লায় দেওভোগ মাদ্রাসা পূর্বনগর এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে কৃষ্ণা সেন (৩২) নামে এক যুবক নিহত হন। সে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ছিল। পুলিশ জানায়, এলাকার উৎসুক জনতার গণপিটুনিতে কৃষ্ণা নামের ওই যুবক নিহত হয়েছে। তিনি চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানা, সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলা আছে। তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এরপর ৪ ডিসেম্বর ভোরে আড়াইহাজারে গণপিটুনিতে রায়হান নামে এক যুবক নিহত হয়। উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া তাঁতিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদ রায়হান (২২) ওই গ্রামের জালালের ছেলে। পুলিশ জানায়, রাতে রায়হান তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ওই এলাকার প্রবাসী ফারুকের বাড়িতে চুরি করতে যায়। রায়হান ওই বাড়ির ছাদের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা আলমারি ভেঙে মালামাল জড়ো করতে থাকে। টের পেয়ে গৃহকর্তী ঘর থেকে বের হয়ে প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে লোক জড়ো করে। এসময় বাইরে থাকা চোরেরা পালিয়ে যায়। কিন্তু রায়হান গৃহকর্ত্রীর বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি টের না পেয়ে মালামাল জড়ো করায় লিপ্ত থাকে। ওই অবস্থায় উত্তেজিত জনতা এসে তাকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।

RSS
Follow by Email