রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Led03অর্থনীতিজেলাজুড়েধর্মবিশেষ প্রতিবেদনসোশ্যাল মিডিয়া

ইবাদতের মাস রমজান, বাড়ছে টুপি-জায়নামাজ ও আতরের চাহিদা

# শবেবরাত-ঈদে আলাদা আলাদা কিনতে পারি না: ক্রেতা
#মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে যাতে দাম থাকে: বিক্রেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘বাবার সাথে ডিআইটি মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছে সাজ্জাত হোসেন, নামাজ শেষে বায়না ধরেছে নতুন টুপি, ছোট জায়নামাজ ও সুগন্ধি আতর কিনে দিতে হবে। নিরাশ না করে স্বাচ্ছন্দে ২ বছরের শিশু ছেলের আবদার পূরণ করলেন আব্দুর রহমান।’ তিনি জানান, রমজানে তারাবীহ নামাজসহ বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজের অভ্যাস করাই সন্তানকে। আসছে রমজান মাস, তাই ছেলে বায়না করায় নতুন টুপি, ছোট জায়নামাজ ও আতর কিনে দিয়েছি।’

শুরু হয়েছে মুসলমান ধর্মলম্বিদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। ইবলিশ শয়তানের ধোকা থেকে মুক্ত হয়ে ইবাদতের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। রমজান মাস মানেই ইবাদতের মাস। এই মাসে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করানোর জন্য তারাবীহ নামাজ ও রোজা আদায়ের মধ্যেমে সিয়াম সাধনা করা হয়। আর রোজায় নামাজ মানেই নতুন টুপি,পাঞ্জাবি ও সুগন্ধিযুক্ত আতর। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে টুপি, আতর, জায়নামাজ ও তসবি কেনাবেচা বেড়েছে।

সরে জমিন নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের নূর মসজিদ, বাগে জান্নাত মসজিদ, মাজদাইর কবরস্থান ও ডিআইটি মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় টুপি, আতর ও জায়নামাজের দোকানে তুলণামূলক ভিড় বেড়েছে। শুধু বড় দোকান নয়, ছোট ছোট দোকানগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। একাধিক দোকানি জানান ‘আগামী রমজান মাস জুড়ে ক্রেতা আরও বাড়বে’।

দৈনিক গড়ে এসব দোকান গুলোতে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তবে রমজানের মাঝখানে খানিকটা কমে যায়। কিন্তু শেষের দিকে এসব দোকানে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয় দৈনিক গড়ে। তবে এবার দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে ব্যবসার বাজার মন্দা যাওয়া আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

টুপি, তজবীহ, জায়নামাজ ও আতর ব্যবসায়ী শাহ আলম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, সবেমাত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এখনো ব্যবসার পরিস্থিতি বুঝা যাচ্ছে না। বাজার অনুযায়ী মোটামুটি ভালোই চলছে। মূলত রমজান মানে যারা রোজা রাখে, সবারই আতর টুপির প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি থাকে। এই মাসেই এসব জিনিসের চাহিদা বাড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে।

তিনি আরও বলেন, রমজান মাসই না, শবেবরাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় আমাদের মোটামুটি বেচাকেনা ভালো হয়। বিগত সময়ে করোনাসহ নানা কারণে আমাদের বেচাকেনা কমে গিয়েছিলো। আমরা আশা করি এবার হয়তো কিছুটা বেশী বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে দাম এতে মানুষের মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব টুপি, আতর আমরা ১০০টাকায় বিক্রি করতাম সেগুলো আমাদের এখন দেড়শ থেকে ২শ’ টাকা বিক্রি করতে হয়। এমন দামে মানুষ হিমশিত খাচ্ছে। আমাদের রমজানের শুরুতে বেচাকেনা মোটামুটি থাকলেও মাঝখানে একেবারে কমে যায়। কিন্তু শেষের দিকে আবার বাড়তে শুরু করে। সরকারের কাছে আমাদের ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা থাকবে, এবার ঈদে যাতে আমাদের নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, নানা রকম নকশা ও কারুকাজে সজ্জিত টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ কাজ করে বেশি। সেদিক থেকে নকশা ও কারুকাজের মান ভালো হওয়ায় এবারে বিদেশি টুপির চেয়ে দেশি টুপির চাহিদা তুলনামূলক বেশি। তবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও পাকিস্তানের টুপির প্রতিও ক্রেতাদের আগ্রহ আছে বলে জানান এই বিক্রেতা।

নগরীর ডিআইটি এলাকায় টুপি কিনছিলেন গলাচিপা এলাকার মো. সাগর কাজী নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজে পাঞ্জাবির সঙ্গে নতুন টুপি না থাকলে বেমানান লাগে। প্রত্যেক বছর টুপি কিনতে আমি ডিআইটি এলাকার দিকেই আসি। বাসায় ২টা কণ্যা সন্তান আছে, তাদের জন্য তজবীহ, আতর আর জায়নামাজ কিনে নিয়েছি। আমার মেয়েরা নতুন সুগন্ধী পেলে অনেক খুশি হয়। তবে এ বছর প্রায় সব জিনিসের দাম বেশী। আগের মতো এখন আর শবেবরাত আর ঈদের জন্য আলাদা আলাদা কিনতে পারি না। ধীরে ধীরে ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে’

বঙ্গবন্ধু সড়কে নূর মসজিদের পাশেই এক আতর বিক্রেতা বলেন, আগে শবেবরাত, রমজান ও ঈদে খুব আতর বিক্রি হত। কিন্তু এখন আর আগের মতন অত বিক্রি হয়না। আমার কাছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের আতর আছে। তবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামের আতরের চাহিদাই বেশি ক্রেতাদের কাছে। কেউ কেউ চার পাঁচ হাজার টাকা দামের আতরও কেনেন বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের নগরের বিভিন্ন আতরের দোকান ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রস্তুত করা আতরের মধ্যে রয়েছে- শাহী দরবার, আলিফ, মারজান, বিলকিস, জেসমিন, রজনী, মদিনা ইত্যাদি। এসব আতরের বেশিরভাগেরই দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে এবং এগুলোই বেশি বিক্রি হয়। দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি আতরের বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম।

নগরীর ডিআইট বায়োজীদ অপটিক্যাল এন্ড লাইব্রেরীর মালিক ব্যবসায়ী আব্দুস ছোবহাস খাঁন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এবছর টুকটাক চলছে বেচাকেনা। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ ও টুপির আইটেম বেশী চলছে। অন্যান্য বছর খারাপ গেলেও এবছর শুরুটা ভালোই যাচ্ছে। ছোট দোকান অনুযায়ী এখন ১০ হাজারের মতো বিক্রি হয়। কিন্তু সামনে আরও বাড়বে বলে মনে হয়। প্রতি বছরের তুলনায় এই বছর সব কিছুর দাম বেশী, তাই আগের থেকে অনেকটা ক্রেতা সংখ্যা কমে গেছে।

RSS
Follow by Email