রাজনীতিতে রাগ-অভিমান করা যাবে না: সেলিম ওসমান
লাইভ নারায়ণগঞ্জ; নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাই জনপ্রতিনিধিদের সম্মান করতে হবে, তাদের পিছে থেকে কাজ করতে হবে। আমি শত্রুর সঙ্গে আলিঙ্গন করে চলি। কারণ আমি কোন শত্রু চাই না। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। আওয়ামী লীগের কোন লোক আমার কাছে এসে ফিরে জাননি। অভাব কত কষ্টের, সেটা সেলিম ওসমানের মতো কেউ জানে ন। তবুও আল্লাহ ছাড়া সেলিম ওসমান কারো কাছে হাত পাতে নাই, মাথা নত করে নাই। কোন ডাক্তার নয়, আমার এলাকার মানুষের দোয়ার কারণেই আমি আজ এখানে কথা বলতে পারছি।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে সিটি কর্পোরেশনের সদর অঞ্চলের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেণ।
সেলিম ওসমান বলেন, নাসিম ওসমান জীবিত থাকতে আমি বলেছিলাম, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসন আওয়ামী লীগের প্রয়োজন। উনি মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, জাতীয় পার্টির সিটটা জাতীয় পার্টিরই থাকবে। আমাকে জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতিকেই নির্বাচন করতে বলা হলো।
তিনি বলেন, আমার দাদা-বাবা-ভাইকে মানুষ ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধুকে যে রাতে হত্যা করা হলো, নাসিম ভাই নিজের সববধুকে রেখে তার হত্যার বিচার চাইতে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলেন। তার পরেও তিনি জাতীয় পার্টিতে কেন গেলেন জাননে? কারণ তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিলো। আমার বাবাকে অপমান করা হলো। নাসিম ওসমান রেগে গেলো। সিধা মানুষ ক্ষেপে গেলে যা হয় তাই। জাতীয় পার্টিতে যাওয়ার জন্য তাকে সহযোগীতা করলেন আমাদের নেত্রী। তখন মোস্তাকের মত হারামিও ছিলো আওয়ামী লীগে। তার জন্য আমাদের কখনো কখনো পাহাড়া দিতে হয়।
তিনি বলেন, এখানে আপনারা সবাই বলেছেন যে, আপনারা আওয়ামী লীগ করেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলবো এখানে আমার থেকে বড় আওয়ামী লীগার এই ঘরে কেউ নাই। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমি ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ বলি নাই। এজন্য জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে এবং খোকাকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম, যে আমাকে নির্বাচন করাইয়েন না। তিনি বললেন,‘তুমি যে আমাকে আপা আপা বলো, জামালকে (বঙ্গবন্ধু পুত্র) যদি বলতাম সে কি আমার কথা শুনতো না?’ তার এই কথা শুনে আমি দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচন করলাম। এইবার আমি নেত্রীকে বলেছিলাম, আগে আমি আমার মায়ের ইচ্ছায়, আপনার ইচ্ছায় নির্বাচন করেছি। কিন্তু এবার আমি আমার ইচ্ছায় নির্বাচন করতে চাই। তিনি বললেন কি উচ্ছা? আমি বললাম, আমাকে যদি নৌকায় উঠান তাহলে আমি নির্বাচন করবো। সেই অনুযায়ী সিটাকে খালি রাখা হলো।’
পরে যখন তেরি-বেরি শুরু হলো, তখন আমার কাছে নির্দেশনা আসলো; আবারো তোমাকে ওইখান থেকেই নির্বাচন রতে হবে। আমার একটাই নীতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি কাজ করে যাবো; অন্য কারো কথা আমি শুনবো না।
সেলিম ওসমান বলেন, আমার ছোট বোন (আইভী) সভা-সমাবেশে আমার উদ্দেশ্যে বলে ‘এবার আপনি নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন’। যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেন, তারা আমার সাথে একটু বসতে পারলেন না? যে এবার নৌকা নিয়ে কে নির্বাচন করবে। কেনো বসলেন না? আমি কি বাইরের লোক, আমি কি রাজাকার? আমি বিভিন্ন স্থানে বলেছি, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসকে এত বড় অফিস বানান যেটা সারা দেশে নাই।
তিনি বলেন, যারা আমার সাথে অন্তর দিয়ে কথা বলেন, তাদের সাথে আমি কথা বলি। সে যত ছোটই হোক না কেন। আমি কোন দলের উপর বিশ্বস্ত না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নাই। রাজনীতিতে রাগ-অভিমান করা যাবে না। আজ আমি ভালোবাসা দিতে পেরেছি তাই ভালোবাসা পেয়েছি। আমার বাবার জানাযায় লাখ লাখ মানুষ হয়েছে, আমার ভাইয়ের জানাযায় লক্ষাথীক মানুষ উপস্থিত হয়েছিলো। আমি যখন থাইল্যান্ডের অপারেশন থ্রেটারে ঢুকছিলাম, তখন ডাক্তার বলেছিলো আমার না ফেরার সম্ভাবনা ৮৫ভাগ। কিন্তু তখন নারায়নগঞ্জে লাখ লাখ মানুষ আমার জন্য দোয়া করেছিলো, যার কারনে আমি আপনাদের কাছে ফিরে আসতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, এটা সেলিম ওসমানের নির্বাচন না, এটা শেখ হাসিনার নির্বাচন। জীবনের শেষ পর্যন্ত আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলবো। আমার সামনে এসে আমার প্রশংসা করবেন না, আমার ভুল ধরবেন এবং বলবেন। আমরা শতভাগ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। ভোট কাষ্টিং এর মধ্যে সারা দেশে নারায়ণগঞ্জ যাতে প্রথম হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাসুদুর রহমান খসরু, রবিউল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি শামসুজ্জামান ভাষানী, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি নাজমুল আলম সজল, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিউয়াজুল ইসলাম, মহানগর কৃষক লীগের আহবায়ক কবির হোসেন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, সাফায়েত আলম সানি, জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আব্দুল কাদির, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ এনসিসি ১১ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড এর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা।