রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
Led02বিশেষ প্রতিবেদনসদর

বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় নারায়ণণগঞ্জের ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী লঞ্চ ঘাট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলরত ৪০টি যাত্রীবাহি লঞ্চ কেটে বিক্রি হয়েছে ভাঙারিতে। যে ক’টি এখনও টিকে আছে, সে গুলো বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছে লঞ্চ মালিকরা। তাদের দাবি, সড়ক পথে সহজ লভ্যতা, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে নৌ-দুর্ঘটনা, নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনকে অবহেলা, ঘাটে হয়রানীর কারণে ক্রমশই যাত্রী কমছে। লোকশানের মুখে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঘাট থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল।

আর বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ‘আধুনিক লঞ্চ নামানোর তাগিদ দিলেও লোকশানের খাত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখানে নতুন করে ব্যয় করতে চাচ্ছে না।’।

জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেষে তৈরি হওয়া নদী বন্দরকে ঘিরেই এক সময় নারায়ণগঞ্জ শহর গড়ে উঠে। ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার আর সড়ক পথের সমন্বয়ে ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতার সাথে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই ঘাট। দু’ বছর আগেও নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল মানেই ছিল প্রাণ চাঞ্চল্যকর একটি জায়গা। যাত্রী, হকার, দোকানী, পরিবহন আর ঘাট শ্রমিকদের হাকডাকে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। যেখানে একটু পর পর আসতো লঞ্চ। পার হওয়ার আগে ঘাটে বসে খাওয়া দাওয়া সারতেন তারা। কেউ করতেন কেনা-কাটা। তাতে গড়ে উঠেছিল নানান ক্ষুদ্র ব্যবসা। এখন আর সেই চিত্র নেই। জীবন যেন অনেকটাই থমকে গেছে এখানে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সমিকরণ মিলাতে না পেরে অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়।

ঘাটের একাধিক হকার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, যাত্রী কমে যাওয়ায় লঞ্চ কমে গেছে। আমরা কোন রকম ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। অনেকেই ঘাট ছেড়ে অন্য পেশায় চয়ে গেছে।

১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ সরকার এই ঘাটটিকে করমুক্ত বন্দর ঘোষণা করলে ইংরেজরা নারায়ণগঞ্জে অফিস স্থাপন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। তখন কলকাতার সাথে ঢাকার বাণিজ্যিক লেনদেনের বিরাট অংশ পরিবহন হতো এই বন্দরের মাধ্যমেই। তবে ১৯৫৫ সালে বর্তমান নদীবন্দরটির আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, মতলব, দাউদকান্দী, আড়াইহাজারের গোপালদী, আসমাইনা, বাতাকান্দী, মুরাদনগর, কুমিল্লার রামন্দ্রপুরসহ দেশের বিভিন্ন রুটে ১৫০টির বেশি যাত্রীবাহী লঞ্চ এই ঘাট থেকে ছেড়ে যেতো। দু’বছর আগেও এ ঘাটে ছিল ৭০টির বেশি লঞ্চ। ক্রমাগত যাত্রী সংকটে লোকশানের মুখে ৪০টি লঞ্চ কেটে বিক্রি হয়েছে ভাঙারিতে। এখন যে ৩০টি টিকে আছে গুলোও অধিকাংশ সময় বন্ধ পড়ে থাকছে ঘাটেই। বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছে মালিকরা।

একাধিক লঞ্চ মালিক-শ্রমিক জানান, যাত্রী সংকটের কারণে এখন অনেক রুট বন্ধ হয়ে গেছে। যে রুট গুলো এখনও চালু আছে, সেগুলোতে যাত্রী সংকট থাকায় লস গুনতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের।

২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঘাটের এমন পরিনতির জন্য সড়ক পথে সহজ লভ্যতা, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে নৌ-দুর্ঘটনা, নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনকে অবহেলা, ঘাটে হয়রানী আর তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ি করছেন লঞ্চ মালিক নেতারা। এতে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে, তা সংখ্যা ভিত্তিক না বলতে পারলেও ক্ষতি ছোট নয়; বলে দাবি করছেন তারা।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, দু’ বছর পূর্বেও ৭০টির বেশি লঞ্চ ছিল। ৪০টির মতো লঞ্চ ভাঙ্গারীতে বিক্রি করা হয়েছে। আমরা লঞ্চ মালিকরা এ পথের কোন ভবিষ্যৎ দেখছি না।

যাত্রী সংকটে লোকশান গুনে যে ৩০টি লঞ্চ এখনও টিকে আছে, সে গুলোর মধ্যে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব লঞ্চ মালিকদের জানুয়ারী পর্যন্ত সময় বেধেঁ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। পাশাপাশি আধুনিক লঞ্চ নামানোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

বিআইডব্লিউটিএ‘র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য জানান, ‘আধুনিক লঞ্চ নামানোর জন্য আমরা মালিকদের কাছে বলছি। কিন্তু মালিকরা লসের খাত হওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

লঞ্চ মালিকরা এখন হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। লঞ্চ ব্যবসা ঘুরে দাঁড় করাতে ঘাট গুলো ইজারা মুক্ত করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা চাইছে সরকারের সহযোগীতা।

RSS
Follow by Email