রবিবার, মে ৫, ২০২৪
Led02জেলাজুড়েরাজনীতিসোনারগাঁ

নৌকার বিজয়ের পর জাপার মেম্বারদের বাড়িতে হামলা-লুট, পশু জবাই করে উল্লাস

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা বিজয়ের পর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি-ঘরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নৌকার শতাধিক সমর্থক একযোগে এ হামলা চালাল বলে জানান নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সাকিব হাসান জয়।

এছাড়া রবিবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার খবর আসে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন পুরো সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আক্রান্তদের সবাই লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্ট ছিলেন।

সাকিব হাসান জয় ওরফে সাকিব মেম্বার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান,আমরা ভোটের দিন সকাল থেকেই নির্বাচনী ক্যাম্পে অবস্থান করছিলাম। তখন আমাদের জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে দেয়া হয় না, যারা লাঙ্গলে ভোট দিবেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরই নৌকা সমর্থকরা আমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় আমাদের বাড়ির অন্তত ৩৫টি ঘর, ফ্রিজ, টিভি, খাট, শো-কেস, আলমিরাসহ সব আসবাবপত্রসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল ভাঙচুর করা হয়। আমার স্ত্রীর ৩৫ ভরি স্বর্ণ, মা ও বোনের ১৫ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া গবাদিপশু গরু ও খাশি নিয়ে যায়, পরে ওরা সেগুলো জবাই করে নির্বাচনের বিজয় উল্লাস করে।

তিনি আরও জানান, আমরা এখন পরিবারসহ পলাতক আছি। আমি রানিং মেম্বার হয়েও আমার নিজ এলাকায় ঢুকতে পারছি না। ওরা আমাকে হুমকি দিয়েছি, আমরা যদি সোনারগাঁও কোথাও তাদের চোখে পড়ি তাহলে আমাদের ঠেং ভেঙ্গে ফেলবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যও নিতে পারছি না। ভোটকেন্দ্রে জাতীয় পার্টির পোলিং এজেন্ট আমার চাচা আবু তাহেল (৩৩) ও আলম চাচার উপরও হামলা চালায় নৌকার সমর্থকরা। তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়, দুজনই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এসময় তার বোন সোনিয়া আক্তার, বাড়ির মাসুদ রানা (২৫), নয়ন (৩০) সহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

জাতীয় পার্টির নেতা ও লাঙ্গল প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাননি মেম্বার, তাদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা। আমরা এসব হামলার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।

খোকার নির্বাচনি সমন্বয়কারী মাহমুদুল আনোয়ার জানান, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল্লাহ সরকারের ভাতিজা ও বাচ্চু সরকারের সাব্বির ও শফিকুলের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থক শতাধিক সন্ত্রাসীরা এ মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালায়।

মেম্বারের বোন সোনিয়া আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তারা পাস করার পর সব শেষ করে দিয়া লাইছে আমগো। বাচ্চুর বাড়ি ও ফকির বাড়ির পোলাপান সব শেষ করে দিয়া গেছে আমাগো। আমগো সবকিছু লুট কইরা নিছে গা ওরা। আমাদের পুরা বাড়িতে ভাঙচুর করছে, আগুন লাগাইয়া দিছে। ৩০/৪০টি বাড়িতে লুট করছে।

মেম্বারের মা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার ঘরে লুট করছে। আমি যে পানি খাব, সেই গ্লাসটাও নাই। আমার ঘর দুয়ার সব লুট করে নিছে। আমাদের পরিবারের ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিছে। এছাড়া ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট সকল জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। হঠাৎ করে এক থেকে দেড়’শ সশস্ত্র মানুষের আক্রমণের ঘটনায় তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। পুরো বাড়িতে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলি করার সময় বাধা দিলে সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থক জামপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শিল্পি বেগম ও সাবেক মহিলা মেম্বার তাহমিনা বেগমের ওপর নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালান।

হামলার শিকার সাবেক মেম্বার তাহমিনা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা টাকা বিতরণ করার সময় বাধা দিলে তারা আমাদের ব্যাপক মারধর করে। এসময় আমিসহ বর্তমান মেম্বার শিল্পী আক্তারও গুরুতর আহত হই।

ভুক্তভোগীরা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা অলি মিয়ার ছেলে শুভ, আমিনদ্দিন, রতনের ছেলে রনি, সোহেল, জিল্লু প্রধানের ছেলে জাকারিয়ার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা চালান। এসময় তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়।

RSS
Follow by Email