বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Led02ধর্মবিশেষ প্রতিবেদন

না.গঞ্জে শীতল পাটিতে দূর্গার সাজসজ্জা, পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বর্জন

#প্রতিমার গহনা তৈরী হয়েছে তালপাতা-খেঁজুর পাতায়
#ককশিট ব্যবহারে পরিবেশ বান্ধব জিনিস গুলো হারিয়ে যাচ্ছে: ভবানী শংকর

সামিতুল হাসান নিরাক, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পরিবেশ দূষণ আমাদের অন্যতম একটি বড় সমস্যা। মুখে মুখে জপলেও বাস্তবে এর তেমন কোন প্রভাব নেই। বাঙালির এদেশীয় উৎসব থেকে শুরু করে ধর্মীয় উৎসব গুলোতে ব্যবহার করা হয় নানা পরিবেশ বিরোধী সামগ্রী। বৈশাখ-ঈদ অথবা পূজো, সব উৎসবেই প্লাস্টিকের ব্যবহার অতিরিক্ত পরিমানের বেড়ে গেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ মাটি, পানি ও বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি। প্লাস্টিক দূষণ হলো পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক বর্জ্যরে আহরণ, যা পরে সামুদ্রিক ও বন্যপ্রাণীসহ তাদের আবাসস্থল, জল, স্থল এবং সর্বপোরি মানবগোষ্ঠীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এদিকে শারদীয় দূর্গা পুজার আগমন ধ্বনি বেজে গিয়েছে আকাশে বাতাসে। শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গা পুজোর কাউন্টডাউন। শরতের প্রাক্কালে বাঙালির মন ও হৃদয় জুড়ে শুরু হয় উৎসব। বলা বাহুল্য, মা দুর্গার আগমন ঘিরে নানা প্রস্তুতি চলতে থাকে। দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালির আবেগের শেষ নেই। মনে হয় যেন এই চারটি দিনের দিকে তাকিয়েই বছরের ৩৬০ দিন বেঁচে থাকা। পুজোর আরতি আরচোনা, মায়ের ভোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন মজার খেলা ও প্রতিযোগিতা; সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট থাকে নারায়ণগঞ্জ। ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হওয়ার অপেক্ষায় নগরীর মন্দির-মণ্ডপগুলো। তবে সেই পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে এবার তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে মূর্ত করে তুলেছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

নারায়ণগঞ্জে মিনাবাজার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে দেবীকে অলংকারসজ্জা সাজানো হয়েছে একেবারে ভিন্ন ভাবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ বান্ধব ও মাটিতে পচনশীল দ্রব্য দিয়ে সাজানো হয়েছে দেবী দেহ। শীতল পাটির মধ্যে রঙের মাধুর্য দিয়ে পরিধান করানো হয়েছে মা দূর্গাকে। গহনা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে তালপাতা, শীতল পাটি ও খেজুর পাতা। ছোট ছোট বাঁশের টুকরা, বাঁশের মুলি দিয়ে মন্ডপে চারপাশ সজ্জিত করা হয়েছে।

কথা হয় মিনাবাজার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে অলংকারসজ্জার কর্মরত শিল্পী অভি কর নয়ন’র সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এবারে আমাদের থিম হলো পরিবেশ বান্ধব প্রতিমা তৈরী করা। দূর্গা পূজায় প্রতিমা, গায়ের অলংকার, স্টেজসহ যাবতীয় সমস্ত কাজ আমরা পরিবেশ বান্ধব মন্ডপ তৈরী করেছি। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটাই ছিলো আমাদের লক্ষ্য। মা দূর্গাসহ অন্যান্য প্রতিমার শাড়ীতে শীতল পাটি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। ওই শীতল পাটির উপর বিভিন্ন ডিজাইন করা হয়েছে। প্রতিমার শরীরে সাধারণত প্লাস্টিকের জিনিস পত্র দিয়ে গহনা তৈরী করা হয়। কিন্তু আমরা প্রতিমার গহনা তৈরীতে ব্যবহার করেছি তালপাতা, শীতল পাটি ও খেঁজুর পাতা।

তিনি আরও জানান, এছাড়া বাঁশের টুকরা, বাঁশের মুলি দিয়ে মন্ডপের অধিকাংশ কাজ করা হয়েছে। প্রতিবারই প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার সময় প্লাস্টিক বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষণ হয়, নদীর পানি দূষণ হয়। সেই কথা মাথায় রেখে যাতে নদীর পানি দূষণ না হয়, পরিবেশ না দূষণ হয়, তাই আমাদের এমন ভিন্ন কনসেপ্ট। আমাদের যেসব উপাদান দিয়ে আমরা প্রতিম, স্টেজ ও অন্যান্য যে কাজ গুলো করেছি, এগুলো বিসর্জনের পর মাটির সাথে মিশে যাবে। সব গুলোই পচনশীল।

অভি বলেন, আমরা মন্দির কমিটি থেকে ব্যাপক সহযোগীতা পেয়েছি। আমাদের নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীরা ও মন্দির কমিটির লোক জনের যৌথ সমন্বয়ে এই পূজা মন্ডপের কাজ সম্পন্ন করেছি।

প্রায় শুরু থেকেই মন্দিরের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতেন ভবানী শংকর রায়। বেশ কয়েকবার মিনাবাজার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি লাইভ নারাণগঞ্জকে বলেন, আমাদের পুজোতে সাজসজ্জায় ট্র্যাডিশনাল বাশঁ, বেধ, বাশেঁর মুলি বেড়া দিয়ে তৈরী করেছি। এবার পূজোয় পরিবেশের ক্ষতি করবে এমন কিছু আমরা ব্যবহার করিনি। বিজ্ঞানের আধুনিকতার কারণে আমাদের বহুল প্রচলিত পরিবেশ বান্ধব জিনিস গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেগুলো আমাদের জন্য কতটুকু গ্রহনীয় ছিলো সেটা মনে করায় দেয়ার জন্য মূলত আমরা এই আয়োজন করেছি। আমাদের দেশে এখন প্রচলিত কালচার হয়ে গেছে ককশিটের ব্যবহার, পূজোর সাজসজ্জায় এটার ব্যাপক ব্যবহার হয়। আর এটা দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে, আমরাও করেছি।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি আমাদের বাশঁ বেধসহ পরিবেশ বান্ধব জিনিস গুলোর প্রতি। আমরা এটাই মানুষের মাঝে তুলে ধরতে চাচ্ছি। এবারের বাশেঁর তৈরী যে বেড়ার সাজসজ্জা করা হয়েছে, এগুলো আমরা খুলে রাখবো। আর এটাকে মূলে রেখে আমরা সামনের বছর আবার এই পরিবেশ বান্ধব আয়োজন করবো।

RSS
Follow by Email