বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
Led04জেলাজুড়েবিশেষ প্রতিবেদনরাজনীতিসিদ্ধিরগঞ্জসোশ্যাল মিডিয়া

না.গঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ১০ বছর

# আপিল বিভাগে ধীরগতি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ হতাশা
# রায় কার্যকর হলে ক্ষমতাশীন অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। নির্মম এ হত্যাকান্ডের ৩৩ মাস পর জেলা জজ আদালতে রায় ঘোষণা এবং ১৯ মাসে হাইকোর্টে রায় হলেও আপীল বিভাগে সাড়ে ৬ বছরেও এর নিস্পত্তি হয়নি। আপীল আদালতে ধীরগতির কারণে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ হতাশা, ভয় ও অনিশ্চয়তায় বিরাজ করছে। হাইকোর্টের রায় আপীল বিভাগে বহাল রেখে অবিলম্বে কার্যকর করার দাবী নিহতদের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের। এ রায় কার্যকর হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতাশীন অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। জেলা জজ আদালতে ৩৫ আসামীর মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিলেও হাই কোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবি চন্দন সরকারসহ সাতজনকে। অপহরণের তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও আইনজীবি চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম সাত জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ফতুল্লা থানায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত আসামীদের স্বীকারোক্তি, জবানবন্দি ও স্বাক্ষ্যগ্রহন শেষে ৩৩ মাস পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারী রায় প্রদান করেন। রায়ে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনসহ র‌্যাব-১১ চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকতা লেফটেনেন্ট কর্ণেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেনেন্ট কমান্ডার এম এম রানাকে ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৭ জনকে ১০ বছর করে এবং ২ জনকে ৭ বছর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রাখেন। আর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। আপীল বিভাগে সাড়ে ৬ বছরেও এর নিস্পত্তি হয়নি।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবি চন্দন সরকারের পরিবারের দাবি আপীল আদালতে যেন এ রায় বহাল রাখেন। রায় দ্রুত কার্যকর হলে নিহতদের আত্ত্বা শান্তি পাবে এমনটাই দাবি। উচ্চ আদালতে ধীরগতির কারণে এখনো নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ, হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে বলে জানান সেলিনা ইসলাম বিউটি। তিনি মনে করেন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ধীরগতি হচ্ছে। দ্রুত রায় বাস্তবায়নে চান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।

নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন জানান, নিন্ম আদালত থেকে হাইকোর্টে দেয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে, বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করি ও এই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানাই। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুবিচারের আশ্বাস বাস্তবায়ন চাই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা মানবাধিকার কমিশন মাহবুবুর রহমান মাসুম জানান, জেলা জজ ও হাই কোর্টের রায় নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য স্বস্তির। উচ্চ আদালতে কার্যক্রম দ্রুত সময়ে নিস্পত্তি করার জন্য প্রধান বিচার প্রতির হস্তক্ষেপ ও দ্রুত এ ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাই।

সাধারণ নাগরিকরা জানায়, শুধু নারায়ণগঞ্জ নাগরিক সমাজই নয় নিম্ম আদালতের রায় বহাল থাকবে এবং দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার দাবী সাধারণ মানুষেরও। রায় বাস্তবায়িত হলে এটা ক্ষমতাশীন অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত ও যুগান্তকারী হয়ে থাকবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জবাসী।

RSS
Follow by Email