শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
Led03রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নিয়ন্ত্রকদের বিভেদ বাড়ছে

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। ফলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে সরকার পতনে লড়াই করে যাচ্ছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে এখন হযবরল অবস্থা। এখানকার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে রীতিমতো মারামারিতে জড়াচ্ছেন। এ নিয়ে হতাশ দলটির সাধারণ নেতাকর্মী; ক্ষুব্ধ হাইকমান্ডও। এই সময়ে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরোধ দলকে দুর্বল করা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে, বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখছে শীর্ষ পর্যায়ের ওই নেতারা। তাদের মতে, ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে, কিন্তু বিরোধ নেই।

জানা গেছে, ডজনখানেক নেতার দিকনির্দেশনায় পরিচালিত হয় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। তারা সকলেই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন অথবা ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি কেন্দ্রে ভালো পরিচয়ও। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দীপু ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামানের, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল প্রমুখ।

সর্বশেষ সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপ।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানের সঙ্গে ছাত্রদলের জুবায়ের রহমান জিকুর নেতৃত্বাধীন গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাটি ঘটে। সাদেকুর রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং জিকুকে অনেকে বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের অনুসারী হিসেবেই চিনে।

বিএনপির ওই সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশের শেষের দিকে জিকুর সমর্থকদের সাথে তর্ক শুরু হয় সাদেক সমর্থকদের। বিষয়টি একপর্যায়ে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। পরে সমাবেশ স্থলে থাকা একটি গাড়িও ভাঙ্গচুর করা হয়। গাড়িটি ছিলো মাহমুদুর রহমান সুমনের (বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক)। এসময় সাদেকুর রহমানের (যুবদল সভাপতি) উপরও জিকু সমর্থকদের চড়াও হতে দেখা যায়।

এর আগে, ৩০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচি চলাকালিন সেখানে হামলা চালায় মহানগর যুবদল নেতা জোসেফ সমর্থকরা। এ সময় পথচারী, সাংবাদিকসহ বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। হামলাকারীরা সড়কে কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করলে চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মহানগর বিএনপির নেতাদের মতে, এই হামলার পিছে রয়েছে বিদ্রোহীদের হাত। তাদের নির্দেশেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বর্তমানে মহানগর বিএনপির কর্তৃত্ব আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর হাতে। মহানগরের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে স্থান পাওয়ার বিষয়েও তাদের অনুসারীরাইিএগিয়ে থাকে। অন্য দিকে, বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছে মহানগর বিএনপির মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল ও মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দু সবুর খান সেন্টু। মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাদের মাঝে বাড়তে শুরু করে দূরুত্ব।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলেই হয়ে থাকে। আর এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সাথে। যা এখণ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। যার কোরণে জেলা বিএনপির তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনেকটা আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সাবেকরা অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে রাজনীতিতে সক্রিয়। আর বর্তমান কমিটির অনেকেই গিয়াসউদ্দিন এর সাথে। জেলার শীর্ষ এই দুই নেতাকে অনেক সময় একে অপরে বিরুদ্ধে তিকর্য বক্তব্য দিতেও শোনা গেছে।

এছাড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে অনেকটা প্রভাব রয়েছে রূপগঞ্জের দুই বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দীপু ও কাজী মনিরুজ্জামানের। তারা দুইজনেই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এই দুই নেতার মধ্যকার বিরোধও বাড়ছে দিন দিন। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বললেও, তলে তলে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে এই দুই নেতা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এই দুই নেতা মনোনয়ন চাইবেন, যাতে কোন সন্দেহ নাই। আর এসব বিষয় নিয়ে তাদের সমর্থকেরাও প্রায় বিরোধে জড়ায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও খোদ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতে, এমন সময়ে এসে দলে দ্বন্দ্ব ক্ষতিকর। এতে, দলের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে তৃণমুল কর্মী ও সাধারণ জনগনের আস্থা। এখন এগুলো না মিটলে সামনে আরও ক্ষতি হতে পারে।

RSS
Follow by Email