দ্বিগু বাবুর বাজারের মীর জুমলা সড়ক ‘মুক্তি’ পেল, স্বস্তিতেও আশংকায় নগরবাসী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘ সময়ের পর হকার ও অবৈধ স্থাপনার শেকল থেকে মুক্তি পেল মীর জুমলা সড়ক। দ্বিগু বাবুর বাজারের পাশে থাকায় সড়কটিতে মাছ, মাংস ও সবজি ব্যবসায়ীরা পশরা বসিয়ে বছরের পর বছর কেনা-বেচা করে এসেছেন। একাধিক বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও সড়কটি পুরোপুরিভাবে হকারদের দখলমুক্ত হয় নি, বরঞ্চ কিছু সময় যেতেই আগের রূপ ধারণ করে। একসময়ের ‘মুড়ির টিন’ খ্যাত যান এ সড়কে অনায়াসে চলাচল করেছিল। কিন্তু হকারদের দখলের কারণে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পথচারীরা হাটার জায়গাটুকু পায় নি। এছাড়াও সড়কে সবজি ও মাংসের উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখায় দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
নগরীতে হকার ও যানজট নিরসনে গোল টেবিল বৈঠকে নানা সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন এনসিসির মেয়র, সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যার ফলে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মীর জুমলা সড়ককে হকাদের শেকল থেকে মুক্ত করার লক্ষে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত মোহাম্মদ নোমান, জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আমির খসরুসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা একাট্টা হয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। সড়কটি আবারও চলাচলের উপযুক্ত হওয়ায় অভিযানে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রশংসা করছে নগরবাসী।
‘কিন্তু এবারের উচ্ছেদে সড়কটি হকার থেকে কত দিনের জন্য মুক্তি পেল’ এমন প্রশ্ন জেগেছে জনমনে। সচেতন মহল বলছে, ২০১৯ এবং ২০২২ সালেও মীর জুমলা সড়কে দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও হকারমুক্ত হয় নি। উচ্ছেদ অভিযানের প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই সড়কটি আগের রূপে ফিরে আসে। যদিও ২০১৯ সালের ২৮ জুন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নির্দেশে গভীর রাতে এ সড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। যেখানে সড়কটি র্দীঘদিনের জন্য হকারমুক্ত ছিল। পরবর্তীতে আবারও সড়ক দখলে নেয় হকাররা। তবে এবার মেয়র-এমপি-প্রশাসন একসাথে কাজ করছে বলে আশার আলো দেখছে নগরবাসী। তাদের বিশ্বাস এবারের উচ্ছেদ অভিযান স্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সড়কের হকারদের জন্য জনগণের ভোগান্তির কথা তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ড. সেলিনা হায়াৎ আইভী। হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে হামলার শিকারও হয়েছেন তিনি। অবশেষে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি নগরীর সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধি-প্রসাশনের বৈঠকে হকার উচ্ছেদে একমত হন মেয়র আইভী, এমপি শামীম ও সেলিম ওসমান।
গোল টেবিল বৈঠকে মেয়র আইভী বলেন, ‘শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান আমার দুই ভাই। এই দুই ভাই যেন আমাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে শহরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে তারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আপনারা প্রতিশ্রুতি দেন, শহরের ফুটপাতে একজনও হকার থাকতে পারবে না।
বৈঠকে মেয়রের প্রত্যাশা পূরণে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান শামীম ওসমান। আইভীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জ আমাদের। আমরা সব জায়গা নিয়েই কথা বলব। ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকারমুক্ত করুন। কবে করবেন জানান, মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে প্রশাসন। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আমার শতভাগ সমর্থন থাকবে।’
বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি বলেন, ‘যানজট ও হকার সমস্যা সমাধান করতে পুলিশকে কাজ করতে হবে। এখানে বিআরটি‘র অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। অবৈধ ইজিবাইকসহ নগরী হকারমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের পাশে শামীম ওসমান আছে। এ শহরকে বাঁচাতে মেয়র আইভীর সঙ্গে আমিও আছি।’