বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

চাহিদার তুলনায় সেবা ও বরাদ্দ বঞ্চিত না.গঞ্জ, বিশেষ ক্যাটাগরি সময়ের দাবি

গোলাম রাব্বি, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শিল্প অধ্যুশিত জেলা হওয়ায় বাংলাদেশের ৬৩ জেলার মানুষের বসবাস এখানে। যেথায় জনসংখ্যা কাগজে কলমে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন। অথচ, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এই জেলা থেকেই ১ কোটি মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। আর সে সময়ে বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা বেশি ছিল সরকারি খাদ্য সহায়তার। সহজেই অনুমান করা যায় এ জেলায় কোটি মানুষের বসবাস। অথচ চাহিদার তুলনায় সরকারি সেবা ও বরাদ্দ হয় কম। এতে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দারা, শিকার হন নানা দুর্ভোগেরও।

সেবা ও বরাদ্দ কম হওয়ার অন্যতম কারণ নারায়ণগঞ্জ একটি ‘বি’ ক্যাটাগরির জেলা।

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার প্রতিটি জেলাকে ‘ক্যাটাগরি’র অন্তর্ভুক্ত করেন। সে অনুযায়ী সরকার জেলার দফতরগুলোতে জনবল নিয়োগ, উন্নয়ন পরিকল্পনা, ত্রাণ ও বরাদ্দ করে।

গুরুত্ব বিবেচনায় ‘বিশেষ ক্যাটাগরি’তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ময়মনসিংহ, খুলনা, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীকে। এছাড়াও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ২৬টি, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ২৭টি ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৫টি জেলা রয়েছে।

অবস্থানগত ও শিল্প-কলকারখানার কারণে নারায়ণগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জেলা। অথচ, গুরুত্ব বিবেচনায় ‘বি’ ক্যাটাগরির জেলা হিসেবে সরকারী নথিভুক্ত নারায়ণগঞ্জ। যেখানে তুলনামূলক নারায়ণগঞ্জ থেকে পিছিয়ে থেকেও সরকারী তালিকায় এগিয়ে আছে কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, সিরাজগঞ্জের মতো ৩২টি জেলা। ফলে, ক্যাটাগরির তালিকায় পিছিয়ে থেকে বরাবরই নারাযণগঞ্জ সরকারি বরাদ্দ কম পাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস।

ইউনিয়নটির পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, জেলার বরাদ্দ কম হওয়ায় চাহিদার তুলনায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না। জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সরকার যদি বরাদ্দ করে, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখন সরকার কুতুবপুরকে একটি ইউনিয়ন হিসেবে দেখছে, আবার লালমনিরহাট জেলার একটি ইউনিয়নকেও এক-ই হিসেবেই দেখছে। অথচ আমাদের ইউনিয়নে জনসংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি সব কিছুর চাহিদাও বেশি। আমরা বরাদ্দ কম পাচ্ছি, অবহেলিত হচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিফাত লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় অন্য জেলার মানুষদের। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে জেলা ভিত্তিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চালু করলেও নারায়ণগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহার করে অন্যান্য জেলার মানুষরাই চাকুরি নিতে দেখা যায়।

সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি নূর উদ্দিন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলাকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সমস্যা গুলোর সমাধন হয়ে যেতো। তাই আমরা দীর্ঘদিন যাবতই বিশেষ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। নারায়ণগঞ্জে সিংহ পুরুষ, সাহসী নারী আর দানবীর রাজনীতিবীদ আছে!, কিন্তু কেউ বিষয়টি নজরে নেয় না কেউ। তারা রাজনীতিতে নিজেদের বলয় গোছাতে যতটা ব্যস্ত, ততটা নারায়ণগঞ্জের মানুষদের নিয়ে ভাবে না। ৪টি উপজেলা হয়েও গাজীপুর যদি বিশেষ ক্যাটাগরির জেলাতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে, তাহলে ৫টি উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কেন হতে পারবে না। নারায়ণগঞ্জের আয়তন ছোট হলেও ঘনত্ব বেশি। যেখানে দেশের অনেক জেলায় ২ লাখ ভোটার হলেই সংসদীয় আসন ঘোষণা করা হয়, সেখানে আমাদের কুতুবপুর ইউনিয়নেই তো ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। ভোটারও প্রায় ২ লাখ। একই ভাবে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সদরে অনেক মানুষ বসাবাস করে। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। তারপরেও নারায়ণগঞ্জের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়। আমরা নির্বাচনের পূর্বে এই জেলাকে বিশেষ ক্যাটাগরির জেলাতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসকরা কি করে গেছে, তা আমাদের জানা নেই। তাদের ফাইল গুলো কী অবস্থায় আছে, জেনে বিশেষ ক্যাটাগরির জেলাতে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।

RSS
Follow by Email