শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
Led05জেলাজুড়েরাজনীতিরূপগঞ্জ

এসপি ও রূপগঞ্জ ওসির বিরুদ্ধে তৈমুর, শাহজাহান ও সাইফুলের অভিযোগ

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে রূপগঞ্জে। ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর থেকে শুরু করে কর্মী সমর্থকদের উপর মারধরে ঘটনা ঘটছে। সেই সাথে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর উপর অভিযোগ করছেন। কিন্তু এবার প্রার্থী নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহীনির দুই কমকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ৩ প্রার্থী। পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার ওপর অনাস্থা এনে অভিযোগ করেছেন তারা।

মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ৩ প্রার্থী। এরা হলেন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. ছাইফুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের এসপি ও রূপগঞ্জের ওসির নেতৃত্বে রূপগঞ্জের নির্বাচন পরিচালিত হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস পাবেন না। নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও রূপগঞ্জের ওসির প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন তারা।

অনাস্থা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার উল্লেখ করেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নিয়ন্ত্রিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা আমাদের কর্মীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসছে বিভীষিকাময় নির্যাতন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে অবহিত করার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। নির্বাচনে জিতে দিতে গোলাম দস্তগীর গাজীর কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। আমি তাদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাদের প্রত্যাহার করা নাহলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়।

স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী, তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূইয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে আবেদন করেন।

শাহজাহান ভূঁইয়া উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে আমি এবং আমার কর্মী ও সমর্থকরা প্রতিনিয়ত নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। যা নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। নৌকার প্রার্থীর লোকরা যে শুধু বাধা দিচ্ছেন তাই নয়, ইতোমধ্যে আমার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আয়েশা আক্তার নামে এক নারীর ওপর হামলা ও মারধর করেছে। দাউদপুরে আমার অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক রফিকুল ইসলাম। শুধু হুমকিই নয় এসব কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী ও সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যে মামলায় জড়াচ্ছে। আর এই কাজে সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছেন রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহা এবং নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল। আমি তাদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক।

এছাড়াও জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নেওয়া প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে একপেশে ভূমিকার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম তার অভিযোগে বলেন, সাধারণ ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় এবং নির্বাচনী প্রচারণা শেষে কর্মীরা বাড়ি ফেরার পথে বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। তারা নারী কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। ভোটের পর গুম-খুনের হুমকি দিচ্ছে। জমি ও বাড়ি দখল করে এলাকা ছাড়া হবে করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পুনরায় লাগাতে গেলে কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নিয়ন্ত্রিত সংঘবন্ধ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।

তিনি তার অভিযোগে আরও বলেন, ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের ফলে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো যারা সন্ত্রাসী তাদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সাধারণ ভোটারদের ও ভুক্তভোগীদের হয়রানি করছে। গোলাম দস্তগীর গাজী দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তার অর্থের অভাব নেই, মানুষের ভূমি দখল করে বিক্রি করে এবং অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। এসব কালো টাকা দিয়ে নির্বাচনে জিততে সব আয়োজন করছেন তিনি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তারা। এ পর্যন্ত বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। তাছাড়া এলাকার সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করছে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি শুধু হুমকিই নয়, এসব কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যে মামলায় জড়াচ্ছে। অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে না দিলে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে নিজেদের মতো করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। অবস্থা এমন হয়েছে যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে নির্বাচনে জয়ী করার এজেন্ডা হাতে নিয়ে কাজ করছে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহা। আমি তার ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাদের প্রত্যাহার দাবি করছি।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের-১ (রূপগঞ্জ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনাকালে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন এবং বেশ কিছু অভিযোগও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।

RSS
Follow by Email