বুধবার, মে ১, ২০২৪
Led02জেলাজুড়েবন্দররাজনীতি

আমার বাবাকে ৮৪ সালে হত্যা করা হয়েছে: মেয়র আইভী

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, আমার বাবাকে ১৯৮৪ সালে হত্যা করা হয়েছে। ওয়ান কাইন্ড অফ হত্যাই, রাজনৈতিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেও এই শহরের নিবেদিত প্রাণ ছিলো, কি না করেছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আলী আহম্মদ চুনকার নাম খুঁজে পাবেন না। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা দেয় অনেক জায়গায়, কথা বলে বুঝে শুনে, সত্য কথা বলতে চায় না। জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে তারাও অনেক সময় অনেক কথা বলতে চায় না। কেন ভাই? ইতিহাসের কথা ইতিহাসে বলবেন। যার যতটুকু অবদান ততটুকু লিখবেন। আলী আহম্মদ চুনকার বয়স কম ছিলো তখন শ্রমিক রাজনীতি করেছে, শ্রমিকের নেতৃত্ব দিয়েছেন সবাই চিনেন। এ শহরে খুন খারাবি যা হয়েছে তার প্রতিবাদ করেছে। খুনি তো ছিলো না। বরঞ্চ খুনিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারই রক্ত আমার শরীরে আমি একই কাজ করে যাচ্ছি।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বন্দরে এক সাংস্কৃতিক কর্মী ও সূধীজনের মিলন মেলায় একথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মেয়র আরো বলেন, আমার বাবা আমারও তো ইচ্ছে করে ইতিহাস জানতে। আমার বয়স যখন ১৬ কি ১৭ তখন আমার বাবাকে আমি হারিয়েছি। আগে প্রবন মানুষ চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারি না। আপনাদের মাঝে বেচেঁ আছি। দুইটা বাচ্চা আমার তাও দেশের বাহিরে, বাচ্চাগুলাও থাকে না আমার কাছে। আমার বাবার জন্য আমি এই দেশে। আমি সব জায়গায় দেশ প্রেমের কথা বলি, আমি ধর্মের কথা বলি, আমি সুফিইজমের বিশ্বাস করি, আমি হিন্দু মুসলিম মানি না, ধর্মে উর্ধে এসে মানুষকে ভালোবাসি। এসব শিক্ষা আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। আজকে ২০ বছর যাবত আমি বাংলাদেশে শুধু আমার বাবার জন্য। আমি বাবা পাগল মেয়ে।

মেয়র বলেন, আমার বাবা মাত্র ৫২ বছর বয়সে নারায়ণগঞ্জের জন্য কাজ করতে করতে চলে গেলো, তাঁর স্বীকৃতিটাও সে ঠিক মতো পেলো না। রনাঙ্গনে এমন কোনো মুক্তি যোদ্ধা নাই যে, আমার বাবা সহযোগিতা না করছে। আমার মায়ের গয়না বিক্রি করছে, বাড়ি বিক্রি করছে। কিন্তু আজতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পায় এমনজন যারা রনাঙ্গনেই যায়নি, যুদ্ধই করেনি তারা।

তিনি আরও বলেন, আগে পুকুরে অনেক সাতার কাটতাম। পুকুরে ২-৩ ঘন্টা নেমে থাকতাম। মায়ের মাইরও খেয়েছি, বকাও শুনেছি। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠেই বের হয়ে যেতাম, কার বড়ই গাছের নিচে বড়ই পড়ে আছে, কার আম গাছের নিচে আম পড়ে আছে। আমি একটু পাড়া মহল্লায় বেশী যেতাম, কারো বাড়িতে কে কি রান্না করছে ওইটাও দেখতাম। কারো বাসায় গিয়ে ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিতাম, মসলা বেটে দিতাম। ছোট বেলায় দারিয়াবান্ধা খেলাসহ নানা রকমের খেলা খেলতাম। এখন অনেক মিস করি। আমি খুব বেশী সাতার কাটতে পছন্দ করতাম। এইজন্য পানি দেখলে আমার নামতে ইচ্ছা করে। সেই পরিবেশ আর এখন নেই। সেই পরিবেশ আমি কিভাবে ফেরত দিবো। সে পরিবেশ ফেরত দিতে গিয়ে কখনো খাল কাটতে যাই, মাঠ বানাতে যাই। বিভিন্নভাবে জায়গা উদ্ধার করে কাজকর্ম করতে চাই। মাঝে মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়, মনোমালিন্য হয়, ঝগড়াঝাটি তো আছেই। আমি যখন থাকবো না, তখন হয়তো এগুলো মনে রাখবেন। আমার মনে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি হয়তো বেশীদিন বাচঁবো না খুব তারাতাড়ি মারা যাবো। কারণ ইদানিং কাজের এতবেশী চাপ, আমি নিজেও ক্লান্ত হয়ে যাই।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি রফিউর রাব্বি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, জেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, জেলা ন্যাপ নেতা এড. আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

RSS
Follow by Email