বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Led05বিনোদনবিশেষ প্রতিবেদনসোশ্যাল মিডিয়া

উন্নত চিকিৎসায় বেঁচে থাকার অধিকার চায় ‘বিড়ালের মা’

#শিশুদের মধ্যে পশুদের খেলনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়
#অন্য কারো ক্ষতি হয় এমন কাজও করা যাবে না: ডা.ফারুক

সামিতুল হাসান নিরাক, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিড়াল ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিড়াল পুষতে অনেকেই পছন্দ করেন। বিড়াল মানুষের জীবনে ভালোবাসা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দ নিয়ে আসে। দীর্ঘকাল ধরে মানুষের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়ে আসছে, তাদের একেবারেই সামনের সারিতে আছে বিড়াল। তুলতুলে, আদুরে আর মুডি এই প্রাণীকে ভালোবাসেন না এমন মানুষ আছে খুবই কম। কিন্তু প্রিয় এই প্রাণী অসুস্থ হলে বা আঘাত পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলে, চিকিৎসার জন্য সেই নারায়ণগঞ্জে নেই তেমন কোন ব্যবস্থা। একই রকমভাবে পশু-পাখির প্রতি অসদাচরণ দিন দিন বেড়েই চলছে, শিশুদের মধ্যে এসব প্রাণীদের খেলনা হিসেবে উপস্থাপন করার ফলে ছোট বেলা থেকে পশুপ্রেমী হয়ে উঠে না বলে অভিযোগ করেন ফতুল্লা পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় জাহানারা খানম মুক্তা এক বিড়ালপ্রেমী। প্রায় ৮০টি বিড়াল পালন করেন মুক্তা। কেউ কেউ তাকে ‘বিড়ালের মা’ বলে ডাকে।

একটি-দুটো পরিচয়হীন আহত বিড়ালের সাথে দেখা। তারপর ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয়া। একটা থেকে আরেকটা, বাড়তে বাড়তে ভালোবাসা চলে আসা। আর ভালোবাসা থেকেই আহত এসব বিড়ালের সঙ্গে বসবাস। অবলা প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিড়ালের আবাসস্থল। ভালোবাসা ও আদর যত্নে আশপাশের ভবঘুরে বিড়ালগুলো তাঁর কাছে আশ্রয় খুঁজে নেয়। আর পরম মমতায় তাদের সাদরে গ্রহণ করেন জাহানারা খানম মুক্তা। যেভাবে একটি সন্তানকে লালন পালন করা হয় ঠিক সেভাবেই মুক্তার বাড়িতে বেড়ে ওঠে এসব দেশি বিড়াল।

স্বামী প্রবাসী এবং দুটি কণ্যা সন্তান আছে মুক্তার। বর্তমানে মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। গত অগাস্টে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বামী আমজাদ তালুকদার। তাই এখন দুই কন্যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে সন্তানতুল্য বিড়ালগুলোর একটা ব্যবস্থা করে যেতে চান। এই চিন্তা থেকে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন বিড়াল দত্তক দেয়ার, রিতিমত ওই পোস্ট ভাইরাল হয়েছে দেশ জুড়ে। মুঠোফোনে শর্ত দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টির ও বেশী বিড়াল দত্তক দেয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু বিড়াল মুক্তার মায়া ত্যাগ করতে না পাড়ায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় সেগুলো ফেরৎ আসছে।

‘বিড়ালের মা’ খ্যাত জাহানারা খানম মুক্তা লাইভ নারায়ণগঞ্জের এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট বেলা থেকেই কুকুর বিড়ালসহ সকল প্রাণীই আমার পছন্দের। পরিবেশ ও সমাজের বাস্তবতার কারণে কুকুর পালতে পারি না। চেষ্টা করি রাস্তায় দেখলে খাবার দেয়ার। একদিন একটি বিড়াল ছানা ঝড়ের কবল থেকে উদ্ধার করে লালন পালন করি। সেখান থেকে শুরু আমার বিড়াল পালা। এরপর থেকে রাস্তায় আহত বিড়াল গুলো চিকিৎসা দিয়ে দিয়ে বাড়িতে রাখতাম। এখন যে বিড়াল গুলো আছে এদের ঠিকঠাক চিকিৎসা দিচ্ছি, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ঔষধ দিচ্ছি। মেয়েদের কাছে চলে যাবো, বিড়াল গুলো লালন পালন করার মতো কেউ নেই। তাই ওদের ভালো একটা জায়গায় রেখে যেতে চাই। যাওয়ার সময়ে বিড়াল গুলা ভালো পরিবারে না দিয়ে গেলে নিজেও শান্তি পাবো না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ভালো কোন পশু ডাক্তার নেই। তবুও আমরা নিজেরা চেষ্টা করে একটা ডাক্তারের চেম্বারের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিতে হলে, অনেক দূর সেই পূর্বাচল বা ধানমন্ডিতে যেতে হয়। নারায়ণগঞ্জে যে সরকারি হাসপাতাল আছে, সেখানে ট্রিটমেন্ট অতো ভালো না। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে একজন দেশের নাগরিক হিসেবে। মানুষের জন্য যেমন চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করা হয়, তেমনি এসব পশুদেরও বাঁচার অধিকার আছে। ওদেরও ভালো চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

মুক্ত আরও বলেন, আমরা ইদানিং বিভিন্ন এলাকাগুলোতে দেখি রাস্তায় যেসব কুকুর-বিড়াল থাকে, তাদের উপর অনেক অত্যাচার ও অমানবিক অত্যাচার করা হয়। মানুষের উপর অত্যাচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। মানুষ খুন করলে বিচার করা হয়, শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু পশু উপর এমন আচরণ সংক্রান্ত আইন থাকলেও এর কোন প্রয়োগ হয় না। আমাদের সমাজের মধ্যে শিশুদের মধ্যে পশুদের খেলনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যার ফলে ছোট বেলা থেকে পশুপ্রেমী হয়ে উঠে না। নিজের সন্তানকে যেমন আমরা আদর করি, সন্তানের খাওয়া দাওয়ার ‘টেক কেয়ার’ করি। একই রকম ভাবে পশুদের সাথেও এমন আচরণ করা উচিৎ। কারণ আপনার সন্তানের ক্ষুধা লাগলে আপনাকে বলবে ক্ষুধার কথা। কিন্তু এই প্রাণীগুলো তার ভালো লাগা, খারাপ লাগা ও ক্ষুধার কথাও বলতে পারে না। তাদের আমরা আঘাত পেলে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু কুকুর-বিড়ালগুলো তাদের ব্যাথা বা আঘাতের যন্ত্রণা প্রকাশ করতে পারে না। আমাদের উচিৎ তাদের অনুভূতি গুলো বোঝা। পশু-পাখির প্রতি নিষ্ঠুরতা এক ধরনের মানসিক বিকৃতি।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ফারুক আহমেদ জানান, একসাথে এতোগুলো বিড়াল পালনে কোন আইনগত সমস্যা নেই। তবে স্বাস্থ্য ঝুকি আছে। যদি বিড়ালকে ভ্যাক্সিন না দেয়, তাহলে ভাইরাস ছড়ানো সম্ভাবনা থাকে। অন্য কারো ক্ষতি হয় এমন কাজও করা যাবে না।

RSS
Follow by Email