নগরীতে শীতের পোশাকে জমে উঠেছে ফুটপাতের বেচাকেনা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় সদ্য প্রবেশ করেছে পৌষ মাস। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকৃতিতের বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন মার্কেট গুলো থেকে শুরু করে ফুটপাত, সব জায়গায় জমে উঠেছে গরম পোশাকের বেচাকেনা। ছেলেদের কোট, ব্লেজার, জ্যাকেট, সোয়েটার, কানটুপি, মাফলার, মেয়েদের কার্ডিগান, শাল, ভারী ওড়না আর শিশুদের রংবেরঙের বাহারি শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি।
একই সঙ্গে লেপ-তোশক, কম্বলেরও চাহিদা বেড়েছে খুব। সামর্থ্যবান পুরুষ, নারী ও তরুণীদের কাছে এখনো ব্লেজার ও শালের কদর কিন্তু রয়ে গেছে আগের মতোই। ভারতীয় সামগ্রীর জন্য সুপরিচিত কিছু দোকানে এ শালের চাহিদা আকাশচুম্বি। দামও কিছুটা বাড়তি।
সরেজমিন দেখা গেছে নগরীর বিপণি বিতান, হকার্স মার্কেট দোকান, ফুটপাতের চাষাঢ়া, কালির বাজার, বঙ্গবন্ধু সড়ক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিপণিকেন্দ্রগুলোতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নতুন-পুরোনো শীতের পোশাকের জন্য উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর ক্রেতার পছন্দের শীর্ষে ফুটপাতের দোকান গুলো। বরাবরের মতো এ বছরও আমদানি করা পুরোনো শীতের পোশাকের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনের পরিধেয় সামগ্রী মজুদ করেছেন দোকানিরা। তরুণ-তরুণী আর শিশু-কিশোরদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কে ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, শীত তেমন একটা প্রভাব পড়েনি গরম কাপড়ের উপরে। বর্তমানে আমাদের বাজার কিছুটা ঠান্ডা সময় পার করছি। প্রতিদিন টুকটাক বিক্রি হয়। রাতের দিকে মোটামুটি একটা চাপ পড়ে কাস্টামারের তবে সেটাও খুব একটা বেশী সময় ধরে থাকে না।
বঙ্গবন্ধু সড়কের ফারুক নামে এক হকার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, প্রতিবারের মত এবারও তরুণদের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইন ও মানের ব্লেজারের কদর বেশি। তার দোকানে তৈরি ব্লেজার (১পিস) ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লডের মাল পাইকারি ক্রয় করে নেয্যমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর মার্ক টাওয়ারে বইছে শীতের পোশাকের গরম হাওয়া। নিচতলার থেকে দ্বিতীয়তলায় বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে এখন ফুলহাতা শার্ট ও জ্যাকেটের দারুণ সংগ্রহ।
মার্ক টাওয়ারের দোকানদার হাবিবুর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, শীতের শুরুতে ক্রেতাদের তেমন কোন চাপ নাই। তবে আমরা আশাবাদী সামনের সপ্তাহ থেকে মোটামুটি একটা চাপ থাকবে কাস্টমারের। এবার শীতের পোষাকের মূল্য এবারেজে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পাওয়া যাবে।
বন্দর উপজেলা থেকে ফুটপাত থেকে কম দামে শীতের পোষাক কিনতে এসেছে আলিফ হোসেন। তিনি বলেন, দিনের বেলা শীতের হাওয়া না থাকলেও সন্ধ্যার পর কিছু ঠান্ডা অনুভুতি তৈরী হয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতও গায়ে লাগতে থাকে। তাই বন্ধুর পরামর্শে ফুটপাত থেকে কম দামে শীতের পোষাক কিনতে এসেছি। ঘুরে দেখছি আপাতত পছন্দ হলেই কিনে নিবো।
পঞ্চবটী থেকে ফজলে রাব্বি নামে এক গার্মেন্ট শ্রমিক বলেন, স্ত্রী ও কণ্যা শিশুকে নিয়ে ফতুল্লা একটি বাসায় ভাড়া থাকি। শীত শহরের দিকে কম থাকলেও ফতুল্লায় মোটামুটি আছে। তাই ছোট মেয়ের জন্য শীতের গরম পোষাক কিনতে এসেছি। দাম কিছুটা বাড়তি। কিন্তু তবুও কিনতে তো হবেই। শীতের কষ্ট তো করা যাইবো না। আমরা জামাই বউ শীতের কষ্ট করতে পারি। মাইয়াডারে কি শীতের কষ্ট দেওন যায়।
এদিকে, লেপ-তোশকের দোকানে কারিগরেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যদিও ক্রমেই লেপ-তোশকের জায়গা দখল করে নিচ্ছে আমদানি করা নতুন-পুরনো কম্বল। ওজনে কম, টেকসই ও গরম হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কালির বাজার শায়েস্তা খান সড়কে এক লেপ তোশক কারিগর মো. মোশারফ হোসেন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, লেপ তোষাকের চাহিদা এখন আর নাই মানুষের মধ্যে। এখন কম্বল আর কমফোর্টারই ব্যবহার করে মানুষ। তুলার চাহিদা আর নাই মানুষের। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ২৫০ গ্রাম তুলা বিক্রি হইছে। আগের একটা সময় ১০টা ১৫টা করে লেপ বানাইতাম। এখন তো কাজই নাই। কেউ আর আগের মতো লেপ তোষক বানায় না। এখন শুধু বালিশ বানায়। সামনে শীত বাড়বে, তখন হয়তো দু একটা লেপ তোষকের অর্ডার পেতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ২৫ বছর যাবত এই ব্যবসায় জরিত। আগে মানুষ লেপ তোষক বানানো জন্য বসে থাকতো। আর এখন কোন রকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আগের মতো নাই আর আমাদের ব্যবসা। এখন সবই পাওয়া যায় মার্কেটে। গত ৫ বছর যাবত আমাদের ব্যবসার লসের দিকে যাচ্ছে। ১ দিন কাজ করলে ৪ দিন বসে থাকতে হয়। সরকার আমাদের একটা নিদ্রিষ্ট যায়গা করে দিলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারবো।
নগরীর ফুটপাতে বিকেল হতেই শীতের পোশাকের মেলা বসে। বিশেষ করে ফুটপাতে আমদানি করা পুরনো শীতের পোশাকের জমজমাট বিকিকিনি দেখা গেছে। তবে ক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম ফুটপাতের বাজারে ক্রেতারাও কিন্তু দরদামের ব্যাপারে ছিলেন বেশ সচেতন। দরকষাকষির পরই দফা রফা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।