নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্কে ৫টাকার বৃক্ষমেলা
ফুল, ফল কিংবা কাঠ জাতীয় যেকোন গাছ কিনতে পারছেন মাত্র ৫টাকায়। এমন ব্যতিক্রম মেলার আয়োজন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্কে । ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী, ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদুজ্জামান। স্থানীয় নাগরিক, শিক্ষার্থী, পরিবেশপ্রেমী এবং শিশুদের উপস্থিতিতে আয়োজনটি হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।
অনু্ষ্ঠানের উদ্বোধনকালে মাসুদুজ্জামান বলেন, কয়েক দশক পূর্বে নারায়ণগঞ্জ ছিল সম্পূর্ণ সবুজে ঘেরা একটি শহর। কিন্তু ধীরে ধীরে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ইট-পাথরের নগরে রূপান্তরিত হয়েছে শহরটি। পাশাপাশি, শীতলক্ষ্যা নদী আজ প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে থাকি, আমরা লক্ষ্য করি – ডিসেম্বর মাসেও শীত অনুভব করা যায় না, অথচ গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যার পরে গরম কাপড় ছাড়া থাকা যায় না। এটি গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবের সরাসরি প্রমাণ এবং আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শহর, দেশ ও পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখতে হলে সবুজায়নকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শহরের মানুষ দিনে দিনে যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। তাই আজকের বৃক্ষমেলা শুধু একটি আয়োজন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের সূচনা। তিনি ৫ টাকায় বৃক্ষ বিতরণ কার্যক্রমকেও স্বাগত জানিয়ে বলেন, “যে সামান্য মূল্যটি দিয়ে গাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে, তা আসলে আপনাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য। যদি গাছগুলো লালন-পালন ও পরিচর্যা করা হয়, তাহলে এটি শুধু শহরের পরিবেশকে নয়, পুরো পৃথিবীর পরিবেশকে সংরক্ষণ করবে। তিনি আরও সবাইকে আহ্বান জানান, “বৃক্ষপ্রেমী হোন, সবুজপ্রেমী হোন, নদী দূষণ রোধ করুন। আমরা বিশ্বাস করি, শীতলক্ষ্যা নদী আবার তার পুরোনো রূপে ফিরে আসবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী আনন্দ ও বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।”
বৃক্ষমেলা আয়োজনে সার্বিক সহযোগীতায় ও সঞ্চালনায় ছিলেন, নারায়ণগঞ্জস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারেক, ডিমান্ড, জাররাফ রহমান, সামি, নাইম, জুবায়ের রহমান, রাহাত এবং নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠানে নগরবাসী, শিক্ষার্থী ও শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং গাছ সংগ্রহ করে শহরের সবুজায়নে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই উদ্যোগ নগরবাসীর মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে আরও বড় সবুজায়ন কার্যক্রমের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষ একত্রিত হয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা সৃষ্টি হয় যে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। অংশগ্রহণকারীরা গাছ সংগ্রহ করে তা শহরের বিভিন্ন খোলা জায়গায় রোপণ করেন এবং এর মাধ্যমে শহরের সবুজায়নে নিজস্ব অবদান রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই উদ্যোগ শুধু শহরের দৃশ্যমান সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেনি, বরং নগরবাসীর মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা এবং জীববৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
