না.গঞ্জ-৩ আসনে গণসংহতির মনোনয়ন পেলেন অঞ্জন দাস
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণসংহতি আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বহু গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া পরিচিত মুখ অঞ্জন দাস। দল তাকে প্রতীক হিসেবে দিয়েছে মাথাল মার্কা। তার এই মনোনয়ন কেবল একটি নির্বাচনী ঘোষণা নয়, এটি নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী ও অবিচল সংগ্রামের স্বীকৃতি।
অঞ্জন দাসের রাজনৈতিক পথ ছিল সর্বদা স্রোতের বিপরীতে। তার নেতৃত্বাধীন আন্দোলনগুলো স্থানীয় ক্ষমতা কাঠামোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তিনি দেশের সামগ্রিক ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ক্ষমতার চরম বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তার কণ্ঠস্বর ছিল অপ্রতিরোধ্য। নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত ত্বকী হত্যা ও ৭ খুনের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সংগঠক। বিশেষত, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর ওসমান পরিবারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার নির্ভীক লড়াই স্থানীয় রাজনীতিতে তাকে ভিন্ন পরিচিতি দিয়েছে। তিনি কেবল রাজনৈতিক ইস্যুতে নয়, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের জন্যও লড়েছেন। মজুরি বৃদ্ধির দাবি, ছাঁটাই ও নির্যাতনবিরোধী শ্রমিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ভূমি দস্যুতার বিরুদ্ধে এবং শীতলক্ষ্যা পাড় দখল প্রতিরোধের আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। এছাড়াও, সাধারণ মানুষের উপর বাসভাড়া বৃদ্ধির অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেও তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তার এই প্রতিটি লড়াইয়ে তিনি বারবার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়েছেন, আঘাত পেয়েছেন এবং রক্তাক্ত হয়েছেন।
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অঞ্জন দাস ছিলেন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। রাজপথে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ অভ্যুত্থানকে আরও গতিশীল করেছিল। তবে এই সক্রিয়তার কারণে তাকে চরম মূল্য দিতে হয়। অভ্যুত্থানের সময় তাকে শীতল বাস পোড়ানোর মামলায় জড়ানো হয়, যা তার ওপর নেমে আসা রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই প্রমাণ।
দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, নির্যাতন সহ্য করা এবং রাজপথে জনগণের পাশে থাকার স্বীকৃতি স্বরূপ গণসংহতি আন্দোলন তাকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তার এই মনোনয়ন মূলত একটি বার্তা—সংগ্রাম ও জনগণের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা কখনো বৃথা যায় না।
অঞ্জন দাস তার এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে সংগ্রামমুখর পথ ধরে এবার সংসদীয় রাজনীতিতে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চান। তিনি জানান, তার নির্বাচনী প্রতীক ‘মাথাল’ যেন তার শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির আন্দোলনেরই প্রতীক। তার এই অংশগ্রহণ সোনারগাঁওয়ের রাজনীতিতে এক নতুন আশার সঞ্চার করবে।
