এসরোটেক্সের চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের হাহাকার, ডিসি অফিসে বিক্ষোভ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পেটে টান আর পিঠে ঋণের বোঝা। ঘরে খাবার নেই, কিন্তু ঘরভাড়া আর দোকানভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে। এই চরম আর্থিক দুরবস্থার মুখে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামলেন ফতুল্লা ধর্মগঞ্জে অবস্থিত এসরোটেক্স গ্রুপের চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা। বকেয়া সার্ভিস চার্জ পরিশোধ ও ৩০ শ্রমিকের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দরিদ্রতার চিত্র তুলে ধরে সুইং অপারেটর রুবিনা ইসলাম অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, “বাবা-মা, ভাই-বোনদের থেকে ৫০০ থেকে হাজার টাকা ধার নিয়ে চলতে হচ্ছে। কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে চলতাছি। আজকে যখন চালের ডিব্বা খুলে চাল দেখি নাই, তখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।” আরেক শ্রমিক মো. নাঈম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুই মাস ধরে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছি, কিন্তু কোনো জবাব পাইনি। ডিসি স্যার আমাদের বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেননি। তাই আজ রাস্তায় নামতে হয়েছে।”
শ্রমিক প্রতিনিধি মো. রাকিব অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, গত আগস্টের ২ তারিখ থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের সময়, বিরতি, নাস্তা—সব বন্ধ করে দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে ফ্লোর ইনচার্জ ও জিএমের সঙ্গে কথা বললে বহিরাগতদের এনে শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হয়। এর জের ধরে অনেক শ্রমিককে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরে সম্পূর্ণভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। রাকিবের দাবি, চাকরি ফেরত না দিলে শ্রম আইনের ২৬ ধারায় সার্ভিস চার্জ পরিশোধের কথা জানালে মালিকপক্ষ তা দিতে অস্বীকার করে।
টানা দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ ও অবস্থান শেষে শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার এই বৈঠক সমন্বয় করেন। তিনি জানান, বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন এর সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শ্রমিকদের দাবি ও অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। বৈঠকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন এই বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।