বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হলেও উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটেছে: রাব্বি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫১ মাস উপলক্ষে সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং ভিন্নমতের ওপর উগ্রবাদীদের উত্থান নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অনুচরদের নতুন করে লুটপাটে লিপ্ত হওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সভায় ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি দেশের বিচারিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনার দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করে রেখেছে তার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এখনো হয় নাই। বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটেছে।”
তিনি উগ্রবাদীদের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “তারা সংস্কৃতির উপর যেমনি আঘাত করছে, তারা ধর্মের ভিন্ন মতের উপর নৃশংস হয়ে উঠছে। কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দিচ্ছে, তারা দুই শতাধিক মাজার ও খানকায় হামলা করেছে, বাউলদের মেলা আখড়ায় হামলা করেছে, নারীরা তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সরকারের নীরবতা এদেরকে ক্রমাগত হিংস্র করে তুলছে।
রফিউর রাব্বি অভিযোগ করেন যে ত্বকী হত্যার বিচার গত সাড়ে এগারো বছর ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘাতক ওসমান পরিবারকে শেখ হাসিনা বার বার পুরস্কৃত করেছে। তারা দোর্দন্ড প্রতাপে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক লাশ ফেলেছে, নারায়ণগঞ্জবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসর লুটেরারা নব্য গজিয়ে ওঠা গডফাদারদের সাথে মিশে নতুন করে লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের প্রত্যাশা তুলে ধরে বলেন, “আজকে পরিবর্তিত বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারদের পুনরুত্থান যেমনি জনগণ চায় না, তেমনি নতুন কোনো স্বৈরাচারের উত্থানও চায় না।”
রফিউর রাব্বি দ্রুত সকল চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বলেন, আজকে আমরা ত্বকী হত্যার এক যুগ পরে ত্বকী সহ সাগর-রুনি, তনু, মিতু এবং নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সকল হত্যার বিচার চাই, আবরার ফাহাদ হত্যার রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই।”
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ এবং দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাড. মাহাবুবুর রহমান মাসুমও সভায় বক্তব্য রাখেন।
অ্যাড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, “১৯৭৩ সালে ওসমান পরিবার জাকসুর সাধারণ সম্পাদক রোকনকে হত্যা করেছিল, সাড়ে বারো বছর আগে তারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। শামীম ওসমান বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। তাদের অনুচরেরা আজকে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকার অভাবে তারা বিভিন্নভাবে ওসমান পরিবারকে সহায়তা করে যাচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, সিপিবি জেলা সভাপতি শীবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, বাসদ জেলা সংগঠক সেলিম মাহমুদ ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ত্বকী’র লাশ উদ্ধার করা হয়।