না.গঞ্জে রিজভীর হুশিয়ারি ‘আরেকটা ঘটনা ঘটলে দায়ী থাকবে না.গঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন যে, ‘গ্যাং অফ ফোর’-এর চারজনের পরামর্শে শেখ হাসিনা সকল অপকর্ম করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মানুষ শেখ হাসিনার এই রক্ত পিপাসু নেতৃত্বের পুনরাবৃত্তি চায় না।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতা মোঃ দোলন ভূঁইয়া’র বাড়িতে তাকে দেখতে গিয়ে এবং চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের পর সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও আসাদুজ্জামান কামাল—এই চারজন সকল হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী আন্দোলনের সময় পরামর্শ দিয়েছিলেন আন্দোলন দমাতে কিছু লোককে হত্যা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনারা কয়েকদিন যাবত দেখতে পেয়েছেন মেয়র তাপসসহ গ্যাং অব ফোরের এসব অপকর্মকারীদের সাথে শেখ হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেখানে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব ফোনালাপে উঠে এসেছে তাদের খুনের মনোবৃত্তি, ডাকাতির মনোবৃত্তি, রক্ত পিপাসু মনোবৃত্তির নানা বহিঃপ্রকাশ।”
আন্দোলনে হতাহতের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্দোলনে ১৪০০ থেকে ১৫০০ শিক্ষার্থী, রিকশাওয়ালা শ্রমিক হত্যাকাণ্ড থেকে কেউ বাদ যায়নি। বিএনপির সাড়ে ৪০০ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪২ জন ছাত্রদল কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ শেখ হাসিনার এই রক্ত পিপাসু নেতৃত্বের কারণে ছটফট করছিল। এই শেখ হাসিনার সরকারের পুনরাবৃত্তি মানুষ চায়না।
আহত ছাত্রদল নেতা দোলন ভূঁইয়া প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “দোলন একজন সাধারণ নিরীহ নিবেদিত প্রাণ বিএনপি কর্মী। তারা একটি সাধারণ পরিবার, ভদ্র পরিবার। সে কিছু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল, তার প্রেক্ষিতে তাকে হামলা করে গুরুতর আহত করা হয়েছে।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আজকে দোলনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্ষতবিক্ষত করা অপকর্মকারীরা প্রটেকশন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই দোলনকে হত্যার উদ্দেশ্যে যারা তার শরীরকে আঘাত করেছে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর দায় কিন্তু নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারবে না।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই দোলনের উপর যারা হামলা করেছে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রটেকশন পাচ্ছে—তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসন কেন গ্রেফতার করছে না? আমাদের দাবি আজকের মধ্যে ওইসব অপকর্ম কারীদের গ্রেফতার দেখতে চাই।”
রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এখানে যদি আরেকটা কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন।”
আক্রমণকারীদের পক্ষে কোনো দলীয় নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন রিজভী। তিনি বলেন, “হামলাকারীদের বিষয়ে এত সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা যদি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, কেউ যদি সেই অপকর্মকারীদের প্রটেকশন দেয়—তারা কারা? প্রশাসনকে এগুলো জানান প্রয়োজন, আমাদেরকেও জানান।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “সে যদি দলেরও কোনো লোক হয়, তার বিরুদ্ধে দলীয় চূড়ান্ত শাস্তি বহিষ্কার করা হবে, সে যত বড় নেতা হোক। এখানে যদি বিএনপির কোনো লোক হয়ে থাকে, আমাদেরকে ফোনে জানান, সে যত পাওয়ারফুল নেতা হোক না কেন আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অপকর্মকারীদের পক্ষে প্রশাসনকে কোনো নেতা যদি ফোন করে থাকে, তার নামও আমাদেরকে জানান।”
তিনি জানান, এ বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যদি দলেরও কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকেন।
প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি দোলন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাওসারের অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হন, এতে তার ডান হাত সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়। তারেক রহমানের নির্দেশে রিজভী দোলনকে দেখতে যান এবং চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।