মাত্র একদিনের ব্যবধানে নিভে গেল ৪টি তাজা প্রাণ, মায়ের কান্না
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: এক অকল্পনীয় আনন্দের পর হঠাৎই নেমে এলো নিদারুণ শোকের ছায়া। একটি নয়, দুটি নয়—একসঙ্গে ছয়টি প্রাণের পৃথিবীতে আগমন ছিল এক অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু সেই আনন্দ যেন বেশিদিন স্থায়ী হলো না। জন্মের মাত্র একদিনের মধ্যেই একে একে নিভে গেল চারটি ছোট্ট প্রাণ। যে নবজাতকদের নিয়ে সবার মনে ছিল অপার সম্ভাবনা, তারাই এখন চিরদিনের জন্য নীরব।
ঢামেক হাসপাতালের নীরব কক্ষগুলোতে এখন শুধু বিষাদের দীর্ঘশ্বাস। যে মা একদিনে ছয়টি সন্তানের জন্ম দিয়ে গোটা দেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন, সেই মায়ের বুক খালি হলো। এক অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর ছিল পুরো পরিবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদের স্বপ্ন পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে।
রোববার সকালে ঢাকার ঢাকেশ্বরী দেব মন্দিরের কাছেই অবস্থিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গিয়ে মোকসেদা আক্তার প্রিয়া (২৩) ছয় সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকদের জন্ম হয়েছিল অপরিণত অবস্থায়। মাত্র ২৭ সপ্তাহ বয়সের এই শিশুদের ওজন ছিল মাত্র ৬১৫ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। তাদের বাঁচানোর জন্য তিনজনকে ঢামেক হাসপাতালের এনআইসিইউতে এবং বাকি তিনজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে রাখা হয়েছিল।
প্রিয়ার ননদ ফারজানা আক্তার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছয় শিশুর মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় প্রথম শিশুটি মারা যায়। এরপর গতকাল রাতে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও একটি শিশু মারা যায়। এরপর সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢামেক হাসপাতালের এনআইসিইউতে আরও দুটি শিশুর মৃত্যু হয়। এভাবে মোট চারটি শিশুর জীবনাবসান হয়েছে।
বর্তমানে দুটি শিশু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মা প্রিয়া এখনও ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন, বাকি দুটি শিশু যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।
ফারজানা আরও জানান, প্রিয়া নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের কাতারপ্রবাসী মো. হানিফের স্ত্রী। তিনি গর্ভধারণের ২৭ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছিলেন। আলট্রাসনোগ্রামে পাঁচটি সন্তান গর্ভে থাকার কথা জানা গিয়েছিল। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রিয়া তার বড় বোন লিপির বাসায় আসেন। সেখান থেকে তিনি মনোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের মেডিকেল অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জানান, শিশুরা অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়ায় তাদের ওজন খুবই কম ছিল, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য বড় হুমকি।
এই শোকের ঘটনায় পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। যে পরিবারে ছয়টি নতুন মুখের আগমন ছিল এক উৎসব, সেই পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে। এই শোক শুধু পরিবারের নয়, এটি মানবতাকে নাড়া দিয়েছে।