না.গঞ্জে সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে আলোকিত মানুষ হওয়ার শপথ নিলো হাজারো শিক্ষার্থী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কেবল জিপিএ-৫ অর্জনই জীবনের শেষ কথা নয়, বরং বড় স্বপ্ন দেখা এবং সৎ ও মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই প্রকৃত সাফল্য। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এভাবেই হাজারো শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরেন জীবনের আসল লক্ষ্য। শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’ ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃতী শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে সকাল থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নিবন্ধন বুথ থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের উপহার ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে, এবং বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলা ও খোশগল্পে মেতে ওঠে।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হক, যিনি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল বিশিষ্টজনদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য। আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনীন্দ্র কুমার রায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বড় হওয়ার জন্য স্বপ্ন থাকতে হবে। বড় স্বপ্ন নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। সে জন্য তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। শুধু মেধাবী হলেই চলবে না, মানবিক মানুষ হতে হবে। সততা ও পরিবার-দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলেই তোমরা আলোকিত ও সফল মানুষ হতে পারবে।”
নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, “তোমরা উচ্চশিক্ষিত হবে। তবে শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না, মানবিক গুণাবলি নিয়ে আলোকিত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।”
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের আদর্শ শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের মা। আমাদের বড় শিক্ষা নিতে হয় চারপাশ থেকে। তাই বড় স্বপ্ন নিয়ে এগোতে হবে, যাতে পরিবার, সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারো।”
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থ আর মাদককে ‘না’ বলার শপথ করান প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, “আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। আর মনে রাখতে হবে জিপিএ-৫ না পেলেও জীবন থেমে যাবে না।”
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সফল নারী উদ্যোক্তা মুনিয়া জামান, লাইভ শপিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশিক খান এবং শিক্ষাবিদ রুমন রেজা। তারা প্রত্যেকেই শিক্ষার্থীদের বড় স্বপ্ন দেখা, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় নিজেদের মেলে ধরার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন, মূকাভিনয়, গান এবং শিক্ষার্থীদের নিজেদের পরিবেশনা পুরো মিলনায়তনে এক উৎসবের আমেজ তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের করতালি, হাসি ও উচ্ছ্বাসে পুরো পরিবেশ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঙ্গে এই আনন্দে অংশ নেন। কৃতী শিক্ষার্থী আফরিন জাহান জানায়, সে আড়াইহাজার থেকে বাবার সঙ্গে এসেছে এবং এই সংবর্ধনায় এসে তার অনেক ভালো লাগছে। দুপুর ১২টায় বন্ধুসভার সভাপতি নয়ন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এই আয়োজনটি সম্ভব হয়েছে শিখো, বিকাশ, কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভার পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতায়।