রবিবার, জুলাই ২৭, ২০২৫
Led01রাজনীতি

না.গঞ্জে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘একটি হত্যা মামলায় ২০ জন আসামি হওয়ার কথা, সেখানে ২শ’ জন করা হয়েছে’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গণঅভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্রের উদ্ধার অভিযান চলছে এবং নির্বাচনের আগে আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি চাঁদাবাজ, মাদক গডফাদার এবং ভারত থেকে অবৈধভাবে পুশইন করা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আজ শনিবার (২৬ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনস পরিদর্শন ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আজ সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথমে র‌্যাব-১১, আদমজীনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্স-এ আগমন করেন। পুলিশ লাইন্স পরিদর্শনকালে তিনি সেখানকার মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি জলপাই গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়াও, তিনি পুলিশ লাইন্সের ক্যান্টিন, রেশন স্টোর, মোটরযান ও জলযান শাখা, এবং পুলিশ লাইন্স মেস পরিদর্শন করে অফিসার ও ফোর্সের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চাঁদাবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “বর্তমানে চাঁদাবাজের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। চাঁদাবাজিদের বিরুদ্ধে ভালোভাবে কাজ করে যেতে হবে। কোনো বিশেষ ব্যক্তিবর্গের রিকুয়েস্টে চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া যাবে না। চাঁদাবাজ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, র‌্যাব কর্মকর্তা থেকে শক্তিশালী না। ধরে ফেলতে হবে।”

মাদকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। বর্তমানে দেখছি মাদকের বিরুদ্ধে তোমাদের কার্যক্রম খুবই ভালো। মূল কাজ হলো মাদকের বড় বড় গডফাদারদের ধরা। আমরা সাধারণত কারবারিদের ধরতে পারি। শুধু কারবারি না, গডফাদারদের গ্রেফতার করতে হবে।”

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আপনারা যদি সত্য সংবাদ প্রকাশ করেন তাহলে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে পারবে না। সত্যি সংবাদ আপনারা প্রকাশ করেন। এটার মধ্যে কোনো লুকোচুরির সুযোগ নেই।” তিনি স্বীকার করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সব সময় সমস্যা তৈরির চেষ্টা করে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলাগুলোর বিষয়ে তিনি জানান, “একটি হত্যা মামলায় যেখানে ২০ জন আসামি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং এখানে তদন্তে বেশি সময় লাগে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনো অবস্থায় শাস্তির আওতায় না আসে। অনেকে স্বার্থের জন্য নিরীহ ব্যক্তিকে মামলার আসামি করেছে। যদি প্রকৃত ব্যক্তিদের নাম আসামির তালিকায় দেওয়া হলে মামলাগুলোর তদন্তে বেশি সময় লাগত না।” তিনি আরও যোগ করেন, অভ্যুত্থানের মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে পুশইন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারত থেকে গত এক মাসে ১৫০০ বাংলাদেশিকে পুশইন করানো হচ্ছে।” তবে তিনি জানান, বর্তমানে পুশইনের সংখ্যা কমে আসছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ভারতে থাকা কোনো রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করা হবে না।”

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ভারতে যেসব বাংলাদেশি রয়েছে তাদের তো নিতে হবে। সেটা ১০ কিংবা ২০ বছর পর হোক। তবে আমাদের নাগরিকদের সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গাদের পাঠানো হয়েছে তাদের গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি।” তিনি ভারতের পুশইন প্রক্রিয়াকে নিন্দনীয় আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা ভারতকে বলেছি আমাদের কোনো নাগরিক যদি ওইখানে থেকে থাকে তাহলে একটা নিয়মের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে। যেমনটা আমরা ভারতীয়দের নিয়মের মধ্যে পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু তারা নিয়মের মাধ্যমে না পাঠিয়ে নদীর পাড়ে, জঙ্গলে ফেলে যায় এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। প্রতিবাদে কিছুটা কাজও হচ্ছে এবং পুশ-ইনের সংখ্যাটা কমে আসছে।”

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো বিভেদ নেই। আমাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আপনাদের (রাজনৈতিক দলের) কাজ জনগণের কাছে গিয়ে ভোট আদায় করা। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ করব যাতে তারা বিরোধ তৈরি না করে।”

এছাড়াও, মোহাম্মদপুরের আলোচিত ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, “এখন পর্যন্ত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি এই ঘটনায় অবহেলা করে থাকে তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনাব এ কে এম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি ও মহাপরিচালক (ডিজি), র‌্যাব; জনাব রেজাউল করিম মল্লিক, ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ; জনাব প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ; জনাব তাসমিন আক্তার, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ); জনাব তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্); জনাব ইসরাত জাহান, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি); জনাব মোঃ সোহেল রানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক ও ডিবি); জনাব মোঃ হাসিনুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য পুলিশ সদস্যবৃন্দ, র‌্যাব-১১ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক (সিও) এডি. ডিআইজি মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, উপ অধিনায়ক মেজর অনাবিল ইমাম, অপস অফিস সিনিয়র এএসপি গোলাম মোর্শেদ সহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা।

RSS
Follow by Email