রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫
Led01বিশেষ প্রতিবেদনসদর

নিভে গেছে চুলো, বন্ধ রান্না: গ্যাস সংকটে না.গঞ্জে হাহাকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঘরের পর ঘর, পাড়ার পর পাড়া—সকাল থেকে একই চিত্র নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। চুলা জ্বলছে না, হাঁড়ি চড়ছে না, রান্না বন্ধ। সকালের নরম আলো ফুটতেই যে ব্যস্ততার ছবি দেখা যায় প্রতিটি বাড়িতে, আজ তার ছিটেফোঁটাও নেই। কেবলই হতাশার দীর্ঘশ্বাস আর অসহায়ত্বের ছাপ প্রতিটি গৃহিণীর চোখেমুখে। শিশুরা না খেয়েই ছুটছে স্কুলের পথে, আর কর্মস্থলে যেতে তৈরি হয়েও থমকে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। গ্যাস সংকটের এই চরম ভোগান্তি এক অচেনা স্থবিরতা এনে দিয়েছে নগরীর দৈনন্দিন জীবনে।

শনিবার (১২ জুলাই) ভোর থেকেই নারায়ণগঞ্জের গলাচিপা, আমলাপাড়া, খানপুর, মিশনপাড়া, মাসদাইর, নন্দীপাড়া, পালপাড়া ও দেওভোগসহ বহু এলাকার চিত্র এমনই। আমলাপাড়ার বাসিন্দা নাহিদা বেগম ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, “সকাল থেকে গ্যাস নেই। ভাত বসিয়েছিলাম, কিন্তু চুলো জ্বলে না। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে স্কুলে গেছে। কী করব জানি না। এমন দুর্ভোগ আগে কখনো দেখিনি।” খানপুরের গৃহিণী রেহানা পারভীনের কণ্ঠেও একই সুর, “গতকাল থেকে চাপ কম ছিল, কিন্তু আজ একেবারেই নেই। সকাল থেকে পানি গরম করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে পাশের হোটেল থেকে খাবার এনেছি। কতক্ষণ এভাবে চলবে কে জানে!”

এই আকস্মিক ও তীব্র গ্যাস সংকটের মূল কারণ হলো ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকায় মুক্তারপুর-পঞ্চবটি দ্বিতল সেতু নির্মাণ কাজের সময় তিতাস গ্যাসের একটি প্রধান পাইপ লিকেজ হয়ে যাওয়া। আজ সকালে এই লিকেজ ধরা পড়ার পরপরই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পাইপ মেরামতের কাজ।

প্রাথমিকভাবে তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এই মেরামত কাজ শেষ করে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু করতে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় এখনো গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। অনেক স্থানেই গ্যাসের চাপ এতো কম যে চুলা জ্বলছেই না, আর কিছু এলাকায় তো সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধই আছে। এতে করে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

গ্যাস না থাকায় অনেকেই এখন বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যাদের বাড়িতে সিলিন্ডার গ্যাস আছে, তারা সেদিকে ঝুঁকছেন। যাদের নেই, তারা ছুটছেন হোটেল-রেস্তোরাঁর দিকে। সকাল থেকেই শহরের ছোট-বড় হোটেলগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ দুপুরের খাবারের জন্য অনেকেই এখন বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীল। পানি গরম করা, জরুরি রান্না করা—সবকিছুই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্যাস সংকটে। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য সাধারণ গ্রাহকরা তিতাস কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, আর কতক্ষণ এই অনিশ্চয়তা চলবে?

RSS
Follow by Email