ফ্যাসিবাদী শাসন শেষ, এবার ভোট ও বাকস্বাধীনতা চাই: এড. টিপু
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘ ১৬ বছরের ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের অবসান ঘটেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার এখনও অধরা। এমনটাই দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে মদনপুরের কেওঢালায় অনুষ্ঠিত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তাঁর কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ ঝরে পড়ল বিগত আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে। টিপু বলেন, “শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৬টি বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময়ে তিনি এদেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছেন, মানুষের ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চলেছে সীমাহীন ইস্টিমরোলার। হত্যা, গুম, খুন আর গায়েবি মামলার জাল বুনে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।” এক শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “যে শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করত, তাকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করে ‘আয়না ঘরে’ বন্দী করা হতো। সেখানে চলতো নির্মম অত্যাচার-অবিচার, অনেককে ঠেলে দেওয়া হতো মৃত্যুর মুখে।”
তবে আশার আলো দেখিয়ে টিপু উল্লেখ করেন, এমন ঘোরতর দুর্দিনে তাদের নেতা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার দিকনির্দেশনা দেন। যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হারুন গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নিয়ে গেলেন এবং তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেন, ঠিক তখনই তারেক রহমান বাকি ৬৫ জন সমন্বয়কের সাথে কথা বলে তাদের মনোবল চাঙ্গা করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এড. টিপু আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কোটা আন্দোলন রূপান্তরিত হয় এক দফা আন্দোলনে, যা চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে।” এই ঘোষণায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে যেন নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয়।
আলোচনায় এড. টিপু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিও কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বাক স্বাধীনতা চাই, ভোটের অধিকার ফিরে চাই। আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই। আমরা দেশের ২০ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। বিগত ১৬টি বছর আওয়ামী লীগ যে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, সে অধিকার তারা ফিরিয়ে দেবে। কারণ ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা দিনের ভোট রাতে সরকারি সংস্থাদের দিয়ে সীল মেরে নিয়ে গিয়েছিল।”
তবে হতাশা প্রকাশ করে তিনি যোগ করেন, “কিন্তু আমরা কি দেখলাম? এই সরকার সংস্কার, সংস্কার বলে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে বাংলাদেশের মানুষকে আর আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েন না!” তার কণ্ঠে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, “কারণ বাঙালি জাতি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ ২৪’শে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং আপনারা সেই ভুল করবেন না, যাতে করে আপনার বিরুদ্ধে আমরা আবারো আন্দোলন সংগ্রাম করি এবং আপনি ক্ষমতাচ্যুত হন। সুতরাং অতি শীঘ্রই আপনি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।”
বন্দর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল আমিনের সভাপতিত্বে এবং মদনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান।