বুধবার, জুলাই ৯, ২০২৫
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

বৃষ্টিতে নগরীর পথে পথে ভোগান্তি ‘রিকশাও নেই, বাসও নেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঘুম ভাঙার আগেই শহরবাসীর জানালায় টোকা দিয়েছে প্রবল বৃষ্টি। ঘড়ির কাঁটা সকাল ৬টা ছুঁতেই শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা আর ধলেশ্বরীর বেষ্টিত নারায়ণগঞ্জে শুরু হয় বৃষ্টির তাণ্ডব। কিছুক্ষণ থেমে আবার ঝেঁপে পড়ছে, এমন একটানা বৃষ্টি যেন শহরটিকে চুপিসারে ডুবিয়ে দিচ্ছে অচেনা কোনো শঙ্কায়। নিম্নচাপের ভয়াল থাবায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে এই নদীতীরবর্তী শহর।

ভোর থেকে শুরু হওয়া এই অবিরাম বর্ষণ শহরের স্বাভাবিক জনজীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত, এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সর্বত্র। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস আরও উদ্বেগের কারণ ঘটাচ্ছে; জানা গেছে, অধিকাংশ উপজেলাতেই রয়েছে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা, সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ১৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এই বৃষ্টির দাপটে তাপমাত্রার পারদও বেশ নিচে নেমে এসেছে। গতকাল সোমবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৩ ডিগ্রি কম। আর আজ মঙ্গলবার ভোরে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি কম। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৮৯ শতাংশ, যা অস্বস্তি আর ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অবিরাম বর্ষণে ডুবছে নগর, অসহায় নাগরিক জীবন
মঙ্গলবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া পথচারীরা। পরিবহন সংকট, ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট আর কর্দমাক্ত সড়ক শহরের চিরচেনা চিত্রকে আরও জটিল ও অসহনীয় করে তুলেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১২ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি বজ্রসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

চাষাঢ়া থেকে বিবি রোড: দুর্ভোগের অন্তহীন পথ
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়াসহ প্রেস ক্লাব, উকিলপাড়া, ২নং রেলগেট, ডিআইটি, শহরের বিবি রোড ধরে চলাচলকারী শত শত মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। গাড়ির স্ট্যান্ডগুলোতে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দীর্ঘ সারি, কোথাও কোথাও ভেজা কাপড়ে যানবাহনে ওঠার জন্য অপেক্ষারত অসহায় মানুষের ভিড়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকায় যান চলাচলে মারাত্মক ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অফিস সময়ে বৃষ্টির কারণে রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজির সংকট ছিল তীব্র। অনেকেই উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন।

চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষমান এক যাত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু বাসের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা এত বেশি যে, ওঠার কোনো উপায় নেই। বৃষ্টির মধ্যে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নরকের সমান!”

মেহেদী হাসান নামের আরেক ব্যক্তি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “সকালের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। আটটার অফিস ধরতে বের হয়েছিলাম সাড়ে সাতটায়। বাস তো দূরের কথা, রিকশাও পাওয়া যাচ্ছিল না। রাস্তার একপাশে হাঁটছি, অন্যপাশে পানি জমে আছে। সাধারণ মানুষদের এই যে ভোগান্তি, এর শেষ কোথায়? আমাদের দেখার কি কেউ নেই?”

তানিয়া আক্তার নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হতাশা নিয়ে বলেন, “ক্লাস ছিল সকাল সাড়ে ১০টায়। বের হতে না হতেই দেখি, রাস্তায় হাঁটারও উপায় নেই। বাসের জন্য আধাঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম, কোনো বাস থামছে না। পরে ভিজেই হেঁটে যেতে হয়েছে।

শুক্রবার পর্যন্ত ভয়ংকর পূর্বাভাস: ভূমিধস ও জলাবদ্ধতার শঙ্কা
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা যেমন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে ভূমিধসের তীব্র আশঙ্কা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারী বর্ষণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নারায়ণগঞ্জের মতো নিচু এলাকাগুলোতেও এই জলাবদ্ধতার প্রভাব ব্যাপক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আগামী কয়েকদিন নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

RSS
Follow by Email