আলিম হয়ে জালেমদের উদাহরণ কিভাবে আনে: প্রশ্ন গিয়াসউদ্দিনের
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। আর এখন তারা নতুন একটি স্বৈরাচারী পদ্ধতি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য পিআর পদ্ধতির কথা বলছে। পিআর পদ্ধতি হলো ইহুদি দেশের পদ্ধতি। সেখানে মদ খাওয়া হালাল, আমাদের দেশে নয়। ওই দেশগুলোতে এমন অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলো আমাদের এই দেশে চলতে পারে না। তারা আলিমদার, ঈমানদার হয় কিভাবে জালেমের শাসনের উদাহরণ এখানে আনে?
রবিবার (৬ জুলাই) বিকেলে এনসিসির ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্যতা নবায়ন ও সদস্য গহন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এসময় প্রধান অতিতির বক্তব্যে এ কথা বলেন মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, আগস্টের পর একটি দল খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। তাদের ভাব দেখে মনে হয়েছে আগামীতে তারাই ক্ষমতায় আসবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন করতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল তা আপনারা সবাই জানেন, তবে স্বৈরাচারের পতনের পর তারা খুব উৎফুল্ল হয়ে কাজ করা শুরু করল এবং বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার শুরু করল। সংস্কার কমিশন নির্বাচনের কেন্দ্রিক অনেক সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেছে, কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন সুপারিশ তাদের ছিল না। এখন জনগণ নতুন শব্দ শুনছে ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই’। অনেকেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বুঝেও না। সেই পাকিস্তান আমল থেকে আমরা সংবিধানিক নিয়মে নির্বাচন করে আসছি। এখানে এমপিদের নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যারা সেই এলাকার জন্য কাজ করেন, মানুষের জনগণের কল্যাণে কাজ করে দলগুলো সেই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় । এরপর নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা জনগণের কাছে যায় ভোট চায়, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এভাবে করেই এতদিন আমরা নির্বাচন করে আসছি। অথচ এই পিআর পদ্ধতি হল, কোন এমপিদের নিয়ে নয় বরং দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হবে সারাদেশে। এরপর বিজয়ের অনুপাতিক হারে দেশের তিনশত আসন ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হবে।
সাবেক এই এমপি আরও বলেন, এই পদ্ধতি বাংলাদেশে চলতে পারে না। যে কোন এলাকা থেকে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দাঁড়ায়। সেজন্য প্রতিনিধি ও এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে, এতে নির্বাচন থাকুক বা না থাকুক। মানুষের সুখে দুখে যে পাশে দাঁড়ায় জনগণ তাকেই ভোট দেয়। অবশেষে নির্বাচিত হওয়ার আগে ঐ এলাকার মানুষের সাথে ওই জনপ্রতিনিধির কিছু কমিটমেন্ট থাকে। যেগুলো নির্বাচিত হওয়ার পর সে পূরণ করে। এখন যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে, তাদের দলীয় মার্কায় ভোট পাওয়ার পর, যে আসন পাবে সেখানে যে কোন প্রার্থী এমপি হিসেবে বসিয়ে দেবে। হতে পারে নারায়ণগঞ্জে সিলেটের কোন প্রার্থীকে এমপি হিসেবে বসিয়ে দিল। শেখ হাসিনার পতনের পর এই ১১ মাসে তারা বুঝতে পারল, নির্বাচনে দাঁড়ালে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই তারা পিআর পদ্ধতির আবিষ্কার করল। পিআর পদ্ধতিতে কোন এমপি যোগ্য নাকি অযোগ্য সেটা বাছাই করার জন্য কেউ রইল না। সেটা বাছাই করবে দলের নেতা। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমান বারবার নির্দেশনা দিচ্ছে, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন এই দেশের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করা কি ঠিক হবে কিনা। কতটা নম্রতা ভদ্রতা থাকলে তিনি এখনো সবার কাছে এসে অনুরোধ করছেন।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, এপিআর পদ্ধতির দাবি জানানোর পেছনে আরেকটি অসাধু উদ্দেশ্য লুকায়িত আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। স্বৈরাচারী দল বিগত সময় অনেক টাকা পয়সা কামিয়েছে, সেগুলো ছোট ছোট দলের মাঝে এখন বিনিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে এ কথাগুলো বলাচ্ছে। তারা চাচ্ছে এই কথাগুলো ওই ছোট দলগুলো থেকে বলিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে নিতে। এটা হয়তো তাদের কোন একটা ষড়যন্ত্র।
আমরা ওলামায়ে কেরামদের সম্মান করি। কিন্তু পাকিস্তানি আমলের অনেক কাজ আছে যেগুলোর জন্য তারা সমালোচিত। আপনারা আর এমন কোন কাজ করবেন না যাতে করে আপনাদের আরও সমালোচনায় পরতে হয়। নিজেরা দলের এবং নিজেদের স্বার্থের কথা না ভেবে দেশের মানুষের কথা ভাবেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, একাত্তরের যুদ্ধ এবং ২৪’র এই আন্দোলন থেকে মানুষের মনে অনেক আশা জন্মেছে। মানুষের এই আশার বিরুদ্ধে কোন কাজ করবেন না। তবে ওলামা একরামদের মধ্যে অনেক গুণীজনও আছেন। তারা ইতিমধ্যে বলেছেন এ দেশের জন্য পিআর পদ্ধতি ভালো হবে না। দেশের জন্য এ ভাবনা করায় আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
সরকারের উচিত সংস্কারের আগে আন্দোলনে যে সরকারি কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, র্যাব, ডিবিররা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। যাতে করে আগামীতে কোন স্তরের মানুষ অন্যায় কাজে লিপ্ত না হয়।
৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি তৈয়ব হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিমের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ অতিথি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি জিএম সাদরিল, মোস্তফা কামাল, মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক এস এম আসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি রওশনালি চেয়ারম্যান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিম মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনিস সিকদার, নারায়ণগঞ্জ জেলা তরুণ দলের সভাপতি টি এইচ তোফা, মহানগর যুবদলের সাবেক আহবায়ক মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম মেম্বার, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক , ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাসাস সদস্য সচিব আকাশ প্রধান।