রবিবার, জুলাই ৬, ২০২৫
Led01Led02ধর্ম

না.গঞ্জের দেড়শ বছরের ঐতিহ্যের তাজিয়া মিছিল প্রস্তুত, দেখা মিলবে রবিবার

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: রাত পোহালেই ১০ই মহররম। তাই শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। একে একে করে নানা সাজে সাজানো হচ্ছে তাজিয়া। ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ, কঞ্চি, কাঠ, ককশিট ও বিভিন্ন রং। সবুজ, বেগুনী, সাদা রঙের কাপড়ে সাজানো হচ্ছে তাজিয়া বা মহানবী (সা.) এর নাতী হোসেনের প্রতীকী কবর। এ কবর বহনের জন্য তৈরী করা হয়েছে কার্টন ও কাঠের তৈরী স্টেজ। স্টেজের চারপাশে থাকছে পালকির মতো করে ৪ জন বহন করার মতো বাঁশ সাটানো। আশুরা বা আরবী মাসের ১০ই মহরমের দিন সেই তাজিয়া কাঁধে নিয়েই বের হবে শোকের মিছিল। ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন ধ্বনিতে মুখরিত হবে নগরীর প্রধান সড়ক থেখে শুরু করে অলিগলি।

শনিবার (৫ জুলাই) নগরীর মেট্রোহল, নিতাইগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে এমন চিত্রের। সড়ক বা কোন ভবনের নিচে একটি অংশে তেরপাল লাগিয়ে চলছে প্রস্তুতি। এই কাজে কারিগরদের সাথে হাত বাড়াচ্ছে ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষ। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। নগরীর মন্ডলপাড়া, কুমুদিনি এলাকার রিলে বাগান, দেওভোগ ও মেট্ট্রোহল থেকে প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল বের হয়।

স্থানীয়রা জানায়, দাদা-নানার আমল থেকে এসকল এলাকায় তাজিয়া মিছিল সবাই দেখে আসছে। যা প্রায় দেড়শ বছর আগ থেকে হবে। এসকল এলাকায় তাজিয়া মিছিল শীয়াপন্থীদের থেকে অনেকটা ভিন্ন। এখানে, বিশ্বাস করা হয়, ‘ইমাম হোসেন, মা ফাতেমা, মহানবী এখনো জীবিত।’ তাই তো তাজিয়া মিছিলে শীয়াদের- হায় হোসেন, হায় হোসেন- প্রতিধ্বানির পরিবর্তে -ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন- প্রতিধ্বনি উচ্চরিত হয়।

এ মিছিলের আয়োজকরা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ, দাদা, নানা তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে আসছে। এবারের তাজিয়া মিছিল আমাদের ১৪১তম ওরশ। সেই ঐতিহ্য আমরা ধরে রেখেছি। এই এলাকায় এবং আশেপাশে থেকে যে যা সাহায্য করে সেই নিয়েই ১০ই মহররম তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করি। কোন খোলা জায়গা না থাকায় সড়কের এক পাশে তাজিয়া তৈরীর কাজ হচ্ছে। আমাদের অনেকেই শিয়া বলে কিন্তু শিয়া আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ওরা তাজিয়া মিছিলে নিজেদের আঘাত করে আর হায় হোসেন বলে শোক পালন করে। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের ইমাম হোসেনকে জীবিত মনে করি তাই ইয়া হোসেন বলি। আমাদের বিশ্বাস ইমাম হোসেন, মা ফাতেমা, মহানবী এখনো জীবিত আছেন। আর তাই আমাদের এই মিছিল। আমরা শুধু তাজিয়া মিছিল করি আর কিছু সিন্নির আয়োজন করা হয়। তবে আমাদের এই আয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই করা হয়।

মেট্রোহল এলাকায় তাজিয়া মিছিলের আয়োজনকারীরা বলেন, সাধারণত ৯ মহররম বাদ মাগরিব প্রথম মিছিল হয়। মুসলিমরা হেঁটে হেঁটে সারা নগরীতে এই মিছিল করে। আশুরার এদিন মিছিল ঘোড়াও থাকে তাদের দুলদুল ঘোড়া বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ঘোড়া নিয়ে মিছিল বা পিঠে আঘাত করে মাতম করা হয় না। এটা শিয়ারা করে। আমাদের তাজিয়া মিছিলের প্রতীক থাকবে একটি ঘর। আর সেই ঘরের ভেতর ইমাম হাসান ও হোসেনের প্রতীকী কবর থাকবে। আর সবার হাতে থাকবে নিশান। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সারা দেশে শত শত বছর ধরে ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হওয়ার দিনটিকে ঘিরে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। এ মিছিল মূলত শোক মিছিল। তার মৃত্যুতে শোক জানাতেই প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল বের হয়। সেদিন মিছিল দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন।

প্রসঙ্গত, হিজরি সালের ১০ মহররম আশুরার দিন বলে বেশ আলোচিত। ঘটনাবহুল এই দিনে কারবালার প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুসলিমরা। এ দিনে শিয়াপন্থী ও মুসলিমদের একাংশ কাধে করে তাজিয়া নিয়ে পথে ঘাটে শোকের মিছিল বের করে। মিছিলের সাথে সিন্নি বিতরণ ও সরবত ফাতেহের আয়োজন করা হয়। তারা বিশ্বাস করেন, ইমাম হোসেন (রা.) যখন কারবালার ময়দানে শহীদ হন, তখন তার মা ও মহানবী (স.) এর কন্যা ফাতেমা (রা.) ছেলেকে দেখতে অদৃশ্যভাবে ছুটে আসেন কারবালায়। তিনি এসে তার শহীদ সন্তান ইমাম হোসাইনকে দেখে যান। একে বলা হয় ‘মারেফত’। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মহররম মাসের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনকে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পালন করেন তারা।

RSS
Follow by Email