বন্দরে যে কারণে ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই খুন..
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার এবং বিভিন্ন বিরোধের জেরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। প্রথমে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়, এবং এর প্রতিশোধ নিতে প্রতিপক্ষের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকায় প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের সামনে দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
নিহতরা হলেন, বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার আব্দুল কুদ্দুস (৬০) এবং সালেহ নগর এলাকার মেহেদী (৪২)। নিহত আব্দুল কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় অটোস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে গত শুক্রবারও দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে অন্তত ৮ জন আহত হন। সেই বিরোধের জের ধরে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক পক্ষের লোকজন অপর পক্ষের সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের স্বজন ও তাদের সমর্থকরা রেললাইন সংলগ্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর রাত ১টার দিকে অপর পক্ষের এক যুবক ও তার লোকজন সিরাজউদ্দৌলার ক্লাব মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের প্রতিপক্ষ ধাওয়া করে। ধাওয়া করে মেহেদী নামের ওই যুবককে ধরে গণপিটুনি ও ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, “আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে উভয়পক্ষের ছুরিকাঘাতে কুদ্দুস ও মেহেদী নিহত হয়েছেন। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে, সেখানে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, “রাতে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এই ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।
এই ঘটনায় পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, এই ঘটনার পর পরই গত রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর রেললাইন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার নিজেও।
তিনি আরও জানান, রাতেই র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে অন্তত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।