না.গঞ্জের বাজারে বিদেশি ছুরি-চাপাতির দাপট, বিপাকে দেশীয় কামাররা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের বাজারে কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ছুরি, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধাতব হাতিয়ারের বেচাকেনা জমে উঠেছে। তবে এবার দেশীয় তৈরি হাতিয়ারের পরিবর্তে চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা বিদেশি ছুরি-চাপাতিই ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে। এর ফলে স্থানীয় কামার শিল্পীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একসময় যেখানে কালীর বাজার, দেওভোগ এবং ডিআইটি এলাকার কামারদের তৈরি মজবুত দা, বটি ও চাপাতির কদর ছিল, এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে চকচকে, হালকা এবং ধারালো বিদেশি হাতিয়ারগুলো। এসব বিদেশি হাতিয়ার দেখতে আকর্ষণীয় এবং তুলনামূলকভাবে দামেও কিছুটা সস্তা হওয়ায় ক্রেতারা সেগুলোর দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।
দেশীয় তৈরি হাতিয়ার যেমন চাপাতি, দা, বটি সাধারণত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে মাঝারি আকারের চাপাতি কিনতে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত লাগছে, এবং আকার বড় হলে ওজনের কারণে দামও বাড়ছে।
অন্যদিকে, বিদেশি হাতিয়ারগুলো বিভিন্ন আকারের উপর নির্ভর করে ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ছুরি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দামে। বিদেশি হাতিয়ারের এই দামের সুবিধা এবং আকর্ষণীয় চেহারা ক্রেতাদের পছন্দের অন্যতম কারণ।
কালীর বাজারের দেশীয় তৈরি হাতিয়ার বিক্রেতারা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা এবং বন্দর এলাকার অনেক কামার আগে ঈদের মৌসুমে অতিরিক্ত কাজ পেতেন। কিন্তু এখন তাদের অর্ডার কম আসছে। পাইকারি কিংবা খুচরা বিক্রিও কমে যাওয়ায় তারা কামারপট্টিতে নতুন অর্ডার দিতে পারছেন না।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিন দিন বিদেশি ছুরি, বটি, চাপাতির মতো দেশীয় হাতিয়ারের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। বিদেশি হাতিয়ার দামে কম, দেখতে ভালো এবং ব্যবহারে সুবিধাজনক হওয়ায় ক্রেতাদের পছন্দের জায়গা দখল করে নিয়েছে। তবে বিদেশি হাতিয়ারের এই বাড়তি চাহিদা স্থানীয় শিল্পের জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশীয় তৈরি ছুরি, বটি, চাপাতির বিক্রি নেই বললেই চলে, এবং কামারশিল্পীরা একেবারেই নিস্তেজ হয়ে গেছেন।
কালির বাজারের এক কামার জানান, “দেশি হাতিয়ার মজবুত হয়। কিন্তু বিদেশি অস্ত্রের চকচকে রূপ দেখে অনেকেই তা কিনছেন। আগের মতো এখন অর্ডার নেই। পাইকারি অর্ডার থাকলে কাজের চাপ থাকে। কিন্তু দিন দিন সেটা কমে যাচ্ছে।”
কালীর বাজারের দেশীয় হাতিয়ার বিক্রেতা গণেশ স্টোরের স্বত্বাধিকারী গণেশ রায় বলেন, “এবার এখনো দেশীয় হাতিয়ার বিক্রির চাপ বাড়েনি। দূরদূরান্ত থেকে পাইকার ক্রেতাদের অর্ডার এবার তুলনামূলক কম। কোরবানির সময় চাপাতি, ছুরি, বটি বিক্রির চাপ থাকলেও গত দুই-তিন বছর ধরে তা কমে গেছে।”
ক্রেতা জোনায়েদ হোসেন বলেন, “দেশি বটি ভালো হলেও এখন বিদেশি বটিগুলো অনেক হালকা, ধারও বেশি। রাখতেও সুবিধা। কোরবানির জন্য দেশীয় চাপাতি কিনলেও বাসায় ব্যবহারের জন্য বিদেশি চাপাতি আর ছুরি কিনতে হচ্ছে। এগুলোর মান ভালো।”
গৃহিণী নাসিমা বেগম বলেন, “লোহার বটি ধোয়া রাখা অনেক ঝামেলা। লোহার ছুরিতে অল্পতে অনেক সময় জং ধরে। এজন্য বিদেশি চাপাতি আর স্লাইস ছুরি কিনেছি। এগুলোর ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক।”