শনিবার, জুন ৭, ২০২৫
Led01জেলাজুড়েপরিবহনবিশেষ প্রতিবেদন

নাড়ির টানে ঘরে ফেরা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পবিত্র ঈদুল আজহা দোরগোড়ায়। পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপনের চিরন্তন টানে মানুষ ছুটছে আপন নীড়ে। আর এই নাড়ির টানে নগর ছেড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। গাড়ির চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হলেও, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে নারায়ণগঞ্জ অংশে এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। ফলে মানুষের ঈদযাত্রা তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। তবে, মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে কোরবানির পশুর হাটের কারণে যানবাহনের গতি কিছুটা শ্লথ হতে দেখা গেছে।

স্বাভাবিক দিনগুলোতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ দিয়ে যেখানে প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজার যানবাহন চলাচল করে, সেখানে ঈদের আগে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেমন সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড় এবং কাঁচপুরের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। দূরপাল্লার বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও, অল্প কিছুক্ষণ পরপরই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে, যা যাত্রীদের অপেক্ষার অবসান ঘটাচ্ছে। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তারা বাড়ি যাচ্ছেন। ঈদ এলেই গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নিয়মিত ঘটনা হলেও, এবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক অংশে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। কিছু কিছু গাড়ির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলেও, অধিকাংশ যাত্রীর অভিজ্ঞতা বলছে, তারা আগের ভাড়ায়ই যাতায়াত করতে পারছেন। এটি ঘরমুখো মানুষের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।

ঘরমুখী যাত্রীরা জানায়, ঈদের ছুটিতে যাচ্ছি বাড়িতে। বাসের জন্য অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভাড়া যেটা ছিলো সেটাই নিচ্ছে। গাড়ি সিট পাওয়া মুশকিল। গাড়িতে টিকি পাওয়া যাচ্ছেনা। রাস্তার পরিস্থিতি ভালো হাটের জায়গা গুলো একটু যানজট থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব ঠিক মতোই পালন করতে দেখলাম।

মহাসড়কের গাড়ির চালকরা জানায়, যাত্রী চাপ আছে কিন্তু রাস্তায় অনেক জ্যাম। যাওয়ার সময় যানজট কিন্তু আসার সময় ক্লিয়ার। গরুর হাটের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। ভাড়া আগের মতোই আছে। আগের থেকে একটু বেশী সময় লাগে যেতে, তবে রাস্তায় কোন চাঁদাবাজ নাই। আগের তুলনায় ভালো। সেনাবাহিনীর জন্য এখন রাস্তা ক্লিয়ার।

বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে কর্মকর্তারা জানায়, প্রকৃত ভাড়াই আমরা টিকিট বিক্রি করতে পারছি না। চাপ থাকার কথা থাকলেও চাপ নাই। রাস্তায় কোন ভোগান্তি নাই। অনেক গাড়ি আগে থেকে ফিলাপ হয়ে গেছে। অনেক যাত্রী সিট পাচ্ছে না। আজকে কালকে চাপ থাকবে। এখানে সার্জনরা খুব ভালো কাজ করছে। অন্যবছর যানজট বেশী থাকলেও এবার কম। সরকার যেটা নির্ধারণ করে দিছে আমরা সেই ভাড়াই নেই। যাত্রীরা এখন অনেক সচেতন, অনেকে হাইস গাড়ি ভাড়া করে চলে যাচ্ছে।

মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ) জুলহাস উদ্দিন জানিয়েছেন, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ঈদ পরবর্তী পর্যন্ত তাদের এই নিরাপত্তা ডিউটি অব্যাহত থাকবে। তাদের এই কঠোর নজরদারি ঈদযাত্রায় মানুষের মনে স্বস্তি যোগাচ্ছে। পুলিশি ব্যবস্থা পর্যপ্ত আছে। ভালোভাবেই মানুষ যেতে পারছে। যদি হঠাৎ কোন স্থানে গাড়ি নষ্ট হয় তাহলে কিছু সময়ের জন্য যানজট পোহাচ্ছে। মহাসড়কে এখন পর্যন্ত কোন অপৃতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সব মিলিয়ে, পশুর হাটের কারণে কিছু স্থানে সাময়িক ধীরগতি ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ঈদযাত্রা এখনও পর্যন্ত নির্বিঘ্ন রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং যাত্রীদের সচেতনতা একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

RSS
Follow by Email