সেলিম মাহমুদ ও সিমাসহ কারামুক্ত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সিমা আ্ক্তারসহ কারামুক্ত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৫টায় ২নং রেল গেইট এলাকায় সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে জেলা সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আয়োজনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান টিপু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, আইনজীবী মাজেদুল হক রাজন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাংগঠনিরক সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, রি—রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়নগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৫ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নিজ বাসা থেকে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ কে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তুলে নিয়ে রুপগঞ্জ থানায় সোপার্দ করে এবং এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ দুটি মামলার আসামী করা হয়। ইতিপূর্বে ৯ এপ্রিল শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে রবিনটেক্স শ্রমিকদের আন্দোলন কে দমন করার উদ্দেশ্যে ৭৮ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখসহ কয়েকশো শ্রমিককে অজ্ঞাত আসামি করে দায়েরকৃত এই মামলায় ইতিপূর্বে রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ২২ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা হয়। দায়েরকৃত মামলায় সেলিম মাহমুদের নাম ছিল না। শুধুমাত্র রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষের অসৎ শ্রম আচরণ ও শ্রমিক নিপীড়নের প্রতিবাদে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানানো এবং নিপীড়িত শ্রমিকদের আইনি সহযোগিতার ব্যবস্থা করায় সেলিম মাহমুদকে গ্রেফতার করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে তারা পূর্বের ফ্যাসিষ্ট সরকারের লুটপাটকারী মালিকদের পক্ষ নিয়ে শ্রমিক অধিকারহরণের নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে যে, রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষ ২৯ মার্চ ১৬ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যূত করে অথচ ১৩ মার্চ শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে ঈদের আগে কোন শ্রমিক কে চাকরিচ্যূত করা যাবেনা। এমনকি ৮ এপ্রিল শ্রম সচিব হঁুশিয়ারী দিয়েছিলেন ঈদের পরে শ্রমিক ছাঁটাই করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে, ঈদের আগে রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রমিকদের চাকরিচ্যূত করা সরাসরি শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের লঙ্ঘন। তাছাড়া, শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার বাধাগ্রস্ত করতে ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনিস্পন্ন থাকা অবস্থায় শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যূত করার চেষ্টা শ্রম আইনেরও লঙ্ঘন। এখনো রবিনটেক্স শ্রমিকদের ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদন বিচারাধিন অথচ সেই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে ৪ মাস যাবত কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা আর সভাপতিসহ ইউনিয়নের সদস্যদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে। সরকারের নির্দেশ অমান্য করলো রবিনটেক্সের মালিক, শ্রম আইন লঙ্ঘন করলো মালিক আর যৌথবাহিনি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারখানা আর রাস্ট্রের সুনামক্ষুণ্ণ করার হাস্যকর অভিযোগ করছে। শুধু বেতন—ভাতা পরিশোধই শ্রম আইনের পরিপালন নয়, ম্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়া এবং দরকষাকষি করা শ্রমিকের মৌলিক অধিকার। শ্রমিককে সংগঠিত হতে বাধা দেওয়া, দরকষাকষির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অর্থৎ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা। রবিনটেক্সের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সেই মুখোশধারী শ্রমিক নিপিড়ক। গত ৫ মে নারায়ণগঞ্জের জজ আদালত থেকে সেলিম মাহমুদ, সিমা আক্তার, মুন্নী আক্তার মিম, রেহানা, হালিমা আক্তার, সুমন কবির, শেফালী আক্তার, মিলন এর জামিন হয়। এখনও শ্রমিক সাদ্দাম হোসেনের জামিন মঞ্জুর হয়নি।
নেতৃবৃন্দ ৭৪ এর কালো আইন বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, সাদ্দাম হোসেনের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৪শতাধিক চাকরিচ্যূতদেও চাকরিতে পুনর্বহাল, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে অসৎ শ্রম আচরণের চর্চা ও শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য প্রকৃত দায়ী রবিনটে´ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।