আদালতে জবানবন্দী, স্ত্রী-জেঠাসকে কুপিয়ে ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে ইয়াসিন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে হত্যা করে বস্তাবন্দী করে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত স্বামী ইয়াছিন আলী। বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামসুর রহমানের আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ) মোহাম্মদ কাইউম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় আসামি ইয়াছিন মিয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের চতুর্থ দিনে গতকাল ইয়াছিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান জানান, ইয়াছিন ঈদের আগের দিন জেল থেকে ছাড়া পান। এর পর থেকে তিনি স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে থাকার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু ইয়াছিনের মাদক সেবন, উচ্ছৃঙ্খল ও কর্মক্ষম না থাকায় তার সঙ্গে থাকতে রাজি ছিলেন না লামিয়া। তিনি তার বড় বোন স্বপ্না আক্তারের সঙ্গে দুই বছরের সন্তান আবদুল্লাহ্ রাফসানকে নিয়ে আলাদা বসবাস শুরু করেন। ঈদের পর ৮ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে ইয়াছিন সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম মিজমিজি পুকুরপাড় এলাকার লামিয়ার ভাড়া বাড়িতে যান। ইয়াছিন ওই বাড়িতে আসায় লামিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার বড় বোন স্বপ্না আক্তার। স্বপ্না মানসিক ভারসাম্যহীন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্বপ্না আক্তার বঁটি নিয়ে এসে ছোট বোন লামিয়াকে মারতে আসেন। এ সময় ইয়াছিন বাসায় আসায় অশান্তি হওয়ায় তাকে বকাঝকা করেন লামিয়া। এতে ইয়াছিন ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপ্না আক্তারের হাত থেকে বঁটি নিয়ে লামিয়ার ঘাড়ে কোপ দেন। এতে লামিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্বপ্না আক্তার চিৎকার শুরু করলে তাকেও বঁটি দিয়ে হত্যা করেন ইয়াছিন। পরে নিজের সন্তান আবদুল্লাহ্ রাফসানকে গলার তাবিজের সুতা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ইয়াছিন।
মো. হাসিনুজ্জামান আরও জানান, হত্যার পর ইয়াছিন স্ত্রী লামিয়া ও তাঁর বোন স্বপ্নার মাথা ও হাত-পা একটি বস্তায় ভরেন। লামিয়া ও স্বপ্নার মরদেহ কম্বল ও কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে আরেক বস্তায় ভরেন। পরে বাড়ির সামনে ময়লার ভাগাড়ে তাঁদের তিনজনের মরদেহ চাপা দেন ইয়াছিন। পরে লামিয়া ও স্বপ্নার রক্তমাখা কাপড় লাগেজে ভরে বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে পুকুরে ফেলে দেন। ওই একই পুকুরে তিনি হত্যায় ব্যবহৃত বঁটিও ফেলে দেন।
উল্লেখ্য, ১১ এপ্রিল দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া পুকুরপাড় এলাকা থেকে দুই নারীর খণ্ডিতসহ এক শিশুর অর্ধগলিত বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত লামিয়ার মেজ বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে নিহত লামিয়ার স্বামী ইয়াছিন আলী, তাঁর বাবা দুলাল মিয়া এবং বোন শিমু আক্তারকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।