বুধবার, এপ্রিল ২, ২০২৫
Led02ধর্ম

জুমাতুল বিদায়ে নগরীর মসজিদে মুসল্লিদের ঢল, দেশের শান্তি কামনায় দোয়া

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কাতারে কাতারে দাড়িয়েছেন মুসুল্লিরা, মিলিয়েছে কাধে কাধ। মসজিদ ও বারান্দা ছেড়ে নামাজের পাটি পৌছে গেছে সড়ক পর্যন্ত। চৈত্র মাসের রোদ উপেক্ষা করেও মুসুল্লিরা বসে আছেন দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় অংশ নিবেন বলে। রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে ‘জুমাতুল বিদা’য় নগরীর মসজিদগুলোতে নেমেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল। নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিপূর্ণ হয়েছে পুরো মসজিদ। খুতবার আগে নফল নামাজ, তসবি পাঠ, দুয়া এবং কোরআন তেলাওয়াত করে সময় পার করছেন মুসল্লিরা।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে নগরীর খানপুর, চাষাঢ়া, কালিরবাজার, ডিআইটিসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদগুলোতে দেখা যায় এমন চিত্র। বেলা ১২টার আগ থেকেই দলে দলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছেন বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা। ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা দ্বিতীয়-তৃতীয় তলায়, বারান্দায় এবং প্রধান সড়কে পাটি বিছিয়ে অবস্থান নেন।

নির্ধারিত সময়ের পর আদায় করা হয় সুন্নত নামাজ। এরপর মুসলিমদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেন মসজিদের ইমাম। জুমাতুল বিদার খুতবায় উচ্চস্বরে উচ্চারিত হয় ‘আল বিদা, আল বিদা, ইয়া শাহরু রমাদান।’ এর অর্থাৎ, বিদায়, বিদায় হে মাহে রমজান। খুতবার পর তাকবির দিয়ে হাত বাধে মুসুল্লিরা। ২ রাকাত নামাজের পর সালাম ফিরিয়ে শেষ হয় আখেরি জুম্মা বা জুমাতুল বিদার নামাজ। ছোট-বড় সব বয়সী মুসুল্লিরা হাত তুললেন মহান আল্লাহ্ দরবারে। মোনাজাতে ইমাম-মুসুল্লিদের কান্নার ভারী হয়ে যায় সুর। চাওয়া হয় দেশবাসীর শান্তি, মা-বাবার জন্য দোয়া, কবরবাসীর জন্য নাজাত।

এসময় নীল নামের এক মুসল্লি বলেন, ‘শুক্রবার এমনিতেই মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জুমাতুল বিদা মানে হচ্ছে রমজানের শেষ শুক্রবার। এই জুমাতুল বিদা আমাদের জানিয়ে দেয় যে আরও একটি রমজান আমাদের কাছে থেকে বিদায় নিয়েছে। আগামী রমজান পর্যন্ত হায়াৎ আল্লাহ্ দেবেন কিনা জানি না, তবে যে মুসলিম এ রমজানে তার গুনাহের জন্য মাফ না পেল সে হতভাগা। তাছাড়া জুমাতুল বিদা দিনটিকে আরও গুরুত্ববহ করে৷ আজ সবাই আগেভাগেই মসজিদে চলে এসেছে৷ মনে হচ্ছে, অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় মসজিদে ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য বেশি। ’

বাবার সাথে মসজিদে এসেছেন ছোট্ট জান্নাতুল মাওয়া নিথি। তিনি বলেন, ‘বাবার সাথে নামাজ পরতে আসছি, ভালো লাগছে। দাদু ভাই দাদীমা, সবার জন্য দোয়া করেছি।’

আদন নামের আরেক মুসল্লি বলেন, ‘রমজান মাসে প্রতিটি দিনের আমল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজকের দিনটা আলাদা, জুমাতুল বিদার গুরুত্ব অন্য যে কোনও দিনের চেয়ে বেশি। তাই সবাই আগেভাগে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আর অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় আজ মসজিদে উপস্থিতি অনেক বেশি এবং একাগ্রতা অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করছি যেন তিনি (আল্লাহ) আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের জীবনকে বরকতময় করেন।’

নানান কারণেই মুসলমানদের কাছে জুমাতুল বিদার গুরুত্ব অনেক। রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়’ (বুখারী, মুসলিম)। তাই সারা বছরের মধ্যে মুমিনের কাছে রমজান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমাতুল বিদার মাধ্যমে কার্যত রোজাকে বিদায় জানানো হয়।

RSS
Follow by Email