সোমবার, মার্চ ১০, ২০২৫
Led04Led05অর্থনীতি

নগরীতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ, ডিলার-দোকানী দুষছেন একে অপরকে

# বেশি দাম দিলে বাজারে কিছুর সংকট থাকে না: ক্রেতা
# তেল কিনতে ডিলাররা বিভিন্ন শর্ত রাখে: বিক্রেতা
# এখন তেলের কোন সংকট নেই : ডিলার পয়েন্টের ম্যানেজার
# অতিরিক্ত দামে নিলে দাড়িয়ে থেকে সরকারি দামে বিক্রি করে আসবো: সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোনাববর হোসেন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নিত্যদিনের বহুল ব্যবহৃত ভোজ্য তেল সয়াবিনের মূল্য নিয়ে ক্রেতা, বিক্রেতা ও ডিলারদের মাঝে একে অপরকে দোষ চাপানোর গল্প শোনা যাচ্ছে হরহামেশাই। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে থেকে বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হলে ক্রেতা দায় চাপান বিক্রেতা বা খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর। আবর খুচরা ব্যবসায়ীরা দোষ দেন বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের উপর। তবে কোন ভাবেই নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪০-৯৫০ টাকায়। যেখানে সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৭৫ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকার প্রতি লিটার তেলের মূল্য ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। তেলের এই অতিরিক্ত দামের পেছনে সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে নগরীর কালিরবাজার, দিগুবাবুর বাজার, ১নং রেলগেইট নিতাইগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা মেলে।

অতিরিক্ত দামের বিষয়ে অভিযোগ করে ক্রেতা আহসান বলেন, রমজান মাস আসলে যে তেলের দাম বাড়ে এটা আগের সরকারের সময় যেমন ছিলো এখনও তাই আছে। মাঝে মাঝে খবরে শুনি তেলের দাম কমানো হয়েছে কিন্তু বাজারে এসে দেখি দোকানদাররা বলে তেল নাই। অথচ একই দোকানে ১৮০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা দিলে তারা ঠিকেই তেল দিবে। টাকা বেশি দিলে তখন বাজারে আর কিছুর সংকট থাকে না। এই ১৬-১৭ বছর ‘দাম বাড়ছে’ ‘বাম বাড়ছে’ বলে চিল্লাইতে হইতেসে, এখনো চিল্লাইতেসি। এমন কোন রমজান পাইলাম না যখন তেলের দাম না বাড়ছে। শুধু তেল না, খেজুর, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংশ, চাল সবকিছুর দামে ঈদ লাগে। শুধু এতা কিছু শুনে খালি মুখে রোজা রাখতে হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের।

আরেক ক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, এরা আসলে সিন্ডিকেট তৈরি করে বাজারে তেলের সংকট তৈরি করে। এই সিন্ডিকেটে যেমন ডিলার আছে তেমন ব্যবসায়ীরাও আছে। প্রতি রমজান আসলে তাদের তেলের সাপ্লাই কমে যায়। কিন্তু এই রমজান আসলেই কেন কমে? এটা কি আদো কমে যায় নাকি কেউ ইচ্ছে করে কমায় সেটা তদন্ত করে দেখা উচিৎ।

হোসেন স্টোরের বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের তো দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা মাল আনি বিক্রি করার জন্য। এখন তেল কিনতে গেলে ডিলারের দেওয়া অনেক শর্ত আমাদের মানতে হয়। একটা তেলের বোতলের গায়ে লেখা ধরেন ৫২ টাকা। ডিলার ৫১ টাকায় বিক্রি করে। এখন আমরা তো ১ টাকা লাভে বিক্রি করতে পারি না। আমাদের ৫ টাকা লাভে বিক্রি করতে হয়। তখনই তেলের গায়ের রেট থেকে বেশি পরে যায়। ডিলাররা শর্ত দেয় শুধু তেল নেওয়া যাবে না, সাথে তাদের কোম্পানির আটা, সুজিও নিতে হবে নাহলে বিক্রি করবে না। এখন আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামি তেলসহ আটা কিনতে হয়। দেখা যায় আমার আটার দরকার নাই তাও কিনতে হয়।

আরেক বিক্রেতা হুমায়ন কবির বলেন, নিতাইগঞ্জ, ১নং গেইট ফলপট্টি যেখানেই যান তারা তিাদের আটা, ময়দা, সুজি ছাড়া তেল বিক্রি করবে না। ডিসেম্বরে সরকার রেট দিসিলো ৫ লিটার তেল ৮৭৫ টাকা। এখন আমার তেল কিনতেই হইতেসে ৯৪০ টাকা রেটে। আজও ১৫ লিটার মাল নিলাম ৯৪৫টাকা রেটে। সাথে না চাইতেও আটা নিতে হইসে। এখন আমি যদি কিনি ৯৪৫ টাকায় আমিতো সংসার চালানোর জন্য সেটা ৯৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। কিছুদিন পরপর মোবাইল কোর্ট আসে। আমাদের কাছে দাম জিগেস করে। এখন গায়ের রেট অনুযায়ি ডিলার বিক্রি না করলে আমারা তো ক্ষতি দিয়ে তো বিক্রি করতে পারি না। তারা আমোদের কাছে সিলিপ বা রশিদ চায়। ডিলাররাই রশিদ দেয় না, দিলে তো তাদের জরিমানা খেতে হইবো। ডিলার রশিদ দেয় না, আমরাও সিলিপ দেখাইতে পারি না দিন শেষে জরিমানা আমাদের করা হয়। এটা যদি ডিলারদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতো তাহলে এই তেলের মিথ্যা সংকট টা থাকতো না।

১নং রেলগেইট বসুন্ধরা ডিলার পয়েন্টের ম্যানেজার জামাল বলেন, আটা নিতেই হবে এমন বাধ্যতামূলক আমরা ভাবে দেই না। আমার সয়াবিন তেলও যেমন এই কোম্পানির তেমন আটাও এই কোম্পানির। রমজান মাসে আটার বিক্রি একটু কমে, তাই কোম্পানি বলেছে ২-১ টা বিক্রির জন্য দিতে। তবে সেটা বাধ্যতামূলক না। ৭-৮ দিন আগেও বাজারে সংকট ছিলো, সারা বাংলাদেশের বসুন্ধরার কোন ডিলারের কাছে তেল পাইবেন না। এই গতসপ্তাহে আসছে তেল এখন আর কোন সংকোট নাই। আমরা সবসময় গায়ের কম রেটেই বিক্রি করি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (জেএম শাখা, আগ্নেয়াস্ত্র শাখা ও জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা) মো: মোনাববর হোসেন বলেন, সরকারের নির্ধারিত যে রেট সেই রেটেই বিক্রি করার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে রমজান মাসে আমাদের ৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আগামীতেও করা হবে। তবে কোন দোকানদার বা ডিলার পয়েন্ট যদি অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এখানে অর্থদন্ড ও হতে পারে আবার আমরা দাড়িয়ে থেকে সরকারি মূল্যে তেল বিক্রি করে দিবো এমনও হতে পারে। আমরা চাই জণগন যেন স্বস্তিতেই পবিত্র রমজান পালন করতে পারে। আমাদের ডিসি স্যারের নির্দেশে আমরা বাজার মনিটরিং রেখেছি।

RSS
Follow by Email