না.গঞ্জের স্কুল-কলেজগুলোতে অমর একুশে পালন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: একুশ মানেই মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের গৌরবময় এক ইতিহাস। একুশ মানেই ভাষা শহীদদের স্মরণ। তাই দিনের শুরুতেই শহীদদের রক্তেরাঙা বেদীতে শ্রদ্ধার ফুল তুলে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। নগ্ন পায়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে চাষাড়ার কেন্দীয় ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে তখন ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের বেদী। এরপর একুশের চেতনাকে জাগ্রত করতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা, দেশাত্বক গান ও নৃত্য। কিছু স্কুলে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রতিযোগীতা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ কলেজ, সরকারী তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও কদম রসূল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যায় এমন আয়োজন। প্রভাতফেরির পর সময় অনুযায়ি শুরু হয় আলোচনা সভা। সেখানেও আগে স্থান পায় পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠ। এরপর জাতীয় সংঙ্গীতের পর শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় ১ মিনিটের নিরাবতা। এরপর উপস্থিত দর্শকের সামনে আরম্ভ হয় গানের কণ্ঠে ও নৃত্যের তালে ৫২র অমর একুশের ইতিহাস উপস্থাপনা। শহীদদের আত্মত্যাগ ফুটিয়ে তোলা হয় কবিতা আবৃতিতেও।
এ সময় শিক্ষকবৃন্দ বলেন, ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চেয়েছিলো, কিন্তু পারে নি। ৫২এর সেই গৌরবময় ইতিহাস শুধু আমাদের মনে ও প্রাণে ধারণ করলে হবে না। আমাদের শিক্ষার্থী ও আগামী প্রজন্মকে সেগুলো পৌছে দিতে হবে। ৫২’র আন্দোলন ছিলো স্বাধীনতার প্রথম আন্দোলন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন বলেছিলো মাতৃভাষা উর্দু হবে, তখনই বাঙালি তার মায়র ভাষার জন্য রাজপথে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। ভাষা আন্দোলনের পরই বাঙালি বুঝতে পেরেছে দাবি আদায় করতে হলে রক্ত দিতে হলেও পিছ-পা হবো না। এরপর আমরা ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪শের গণঅভ্যুত্থান পেয়েছি। একুশের চেতনা বুকে ধারণ করেই বাংলাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা সেই লক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে সংঙ্গীত ও নৃত্যর মধ্যে দিয়ে বাংলা সংস্কৃতির সাথে আমাদের অনুভূতির জায়গাটা দেখাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান ভাষা শহীদদের ত্যাগের ও মহিমার স্মৃতি স্মরণ করে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করি। অমর একুশে আমাদের এক অস্তিত্বের নাম। যে অস্তিত্বকে ঘিরে ছবির মত করে ফুটে উঠে আমাদের বাঙালিত্ব, বাংলা এবং বাংলাদেশ। ১৯৫২ সালের এই দিনে আমাদের বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকে তাজা রক্ত দিয়ে পাক বাহিনীকে বুঝিয়ে দিয়েছিল আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে কত বদ্ধপরিকর। আমাদের ভাষা আন্দোলনের পথ ছবি নয়, এই আন্দোলন ছিল আমাদের মুক্তি আন্দোলন। আমাদের অস্তিত্ব এবং জাতি সত্তা রক্ষার আন্দোলন। তাই অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা আমাদের শরীরের রক্তের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না। আমরা যেমন রক্ত বিহীন অস্তিত্বহীন। তেমনি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণবিহীন বাঙালিহীন। স্কুল-কলেজের যে অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির আয়োজন হয় সেটা প্রতিবার আমাদের ভিতরে সেই চেতনাকে জাগ্রত করে। সকাল থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলে খুব ভালো লাগে। তাই শত কাজ থাকলেও চেষ্টা করি এই দিবসগুলোর অনুষ্ঠানে আসতে।