বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
Led01রাজনীতি

গণমাধ্যমগুলো ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলোনা: ডা. শফিকুর

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর কিছু করণীয় আছে বলে আমরা মনে করি। ২৪ এর আন্দোলনে আমরাও শহীদ ছিলাম। আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো জাতি যেমন মুক্তি পেয়েছে, তেমনই সবচেয়ে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলটিও একইভাবে মুক্তি পেয়েছে। সুতরাং, এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রয়োজন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারকের’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে গিয়েছি, তাদের প্রতি সম্মান দিতে ও তাদের থেকে দোয়া নিতে। কারণ তারা সৌভাগ্যবান, তাদের পরিবার দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। কিছু ইতিহাস মানুষের জন্য হয় আনন্দের, কিছু হয় বিষাদের, আর কিছু হয় গৌরবের। বিশেষত যারা দেশের জন্য জীবন দেন, অতীতেও দিয়েছেন ৪৭ সালে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ সালে এবং সর্বশেষ ২৪ এর জুলাইয়ে। তাদের ইতিহাসটা গৌরবের।

তিনি বলেন, আজ যে গণমাধ্যমগুলো এখানে এসেছে, তারাও কিন্তু ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলেন না। সেসময় তাদেরকেও জীবন দিতে হয়েছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। বিদেশে বসে যারা বাক এবং কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, দেশের মাটিতে তাদের পরিবারকে হেনস্থা করা হয়েছে, জেলে পুরে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নারীদেরকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের রুচি যে কত নিম্নস্তরের ছিল, এসব কর্মকাণ্ড থেকেই তা বোঝা যায়। যারা নিজেদের জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে আমাদের আজকের এই পরিবেশটি উপহার দিলেন, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশ আমাদের সবার। কিন্তু দিন শেষে দেশের পাহারাদারিত্ব করা কিন্তু সব নাগরিকের কর্ম নয়। এই কাজ কিছু লোক করে। আবার কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর অপকর্মটি যারা করে, তারা এটিকে তাদের পেশা মনে করেই করে। একটা সময় তা নিজের অধিকার বলেই মনে করে, আর জনগণকে নিজের প্রজা মনে করে, আর নিজেরা রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের ডালে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে পড়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে ইতিহাস রচনা করতে পারিনি। জুলাই আন্দোলনে আহতরা এখন হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন। এসময় জাতির পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। অতীতে যারা ফ্যাসিস্ট শাসক ছিল, তাদের নাম ধর্মগ্রন্থেও উঠে এসেছে। একই পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে, কিন্তু তার থেকে শিক্ষা নেয় না। আমাদের দেশের ইতিহাস বিকৃতির ইতিহাস। দেশের ইতিহাস অনেকে যার যার মতো রচনা করেছেন।

শফিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদের শাহাদাত ছিল জুলাই আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। একটা নিভৃত পরিবারের ছেলেটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সে জেনেশুনেই শহীদ হওয়ার জন্য বুক পেতে দিয়েছিল। তার পথ ধরে বাকি শহীদরা বলেছে, আবু সাঈদ আমার ভাই, আমরাও শাহাদাতের সিঁড়িতে পা রাখতে চাই। শহীদ ভাইয়েরা তার পরিবারকে বলেছে, আমরা যদি শহীদ হয়ে যাই, তোমরা তাতে কেঁদো না। এতেই বোঝা যায়, দেশের মানুষ কতটা নির্যাতিত ছিল।

তিনি বলেন, আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই রাজনৈতিক দল ও এর অংশীজনদের বলতে চাই, বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনও কাজ আপনারা করবেন না। যদি করেন, তাহলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের রক্তকে অপমান করা হবে। আর যারা জীবিত শহীদ রয়েছেন, তারা ভীষণ কষ্ট পাবে ও অভিশাপ দেবে।

এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

RSS
Follow by Email