সাংবাদিক তোফাজ্জল স্মৃতিচারণে নাগরিক স্বরণসভা
# বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তোফাজ্জল: মাও. মঈনুদ্দিন
# তোফাজ্জল সাহেবের সাথে কারাভোগ করেছি: মনিরুল ইসলাম রবি
# তোফাজ্জল ভাই একজন পন্ডিত পুরুষ ছিলেন: এড. মাসুম
# বিদ্রোহী মনোভাব রাখতেন তোফাজ্জল ভাই: সাবেক কাউন্সিলর খোরশেদ
# উনার মতো সাংবাদিকতা করলে গডফাদারদের পদার্পণ হতো না: রাজিব
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সম্পাদক প্রয়াত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের স্বরণে নাগরিক স্বরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকালে সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন নাগরিক স্বরণ পরিষদ’র আয়োজনে ওই সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রয়াত সাংবাদিক মো. তোফাজ্জল হোসেন’র স্মরণে দোয়া ও আলোচনা করা হয়। সভায় উপস্থিত বক্তা ও প্রয়াত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন’র সহ কর্মীরা তার সাথে কাটানো স্মৃতিময় সময় স্বরণ করেন।
সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন নাগরিক স্বরণ পরিষদ’র আহ্বায়ক ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ’র সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম রবি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুকুল ইসলাম রাজিব, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমীর মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, নারায়ণগঞ্জ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হাজী হাবিবুর রহমান শ্যামল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখন, ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানাসহ নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া প্রয়াত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের স্বরণ সভায় পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম সবুজ, ছোট ছেলে মাহমুদুল ইসলাম সৌরভ ও কণ্যা জাওয়াতা আফনান সুরভী।
সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ বলেন, নিঃসন্দেহে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি ছাত্র নেতা ছিলেন, সাংবাকিদ ছিলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, ইসলাম ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তোফাজ্জল আজীবন কাজ করেছেন। তিনি একজন সাহসী মানুষ ছিলেন এটা সবাই জানে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছেন। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছে। সে সব সময় সচ্ছলভাবে থাকার চেষ্টা করেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ১৯৯৭ সালে গডফাদার শামীম ওসমান আমাদের কারাগারে পাঠালেন। তোফাজ্জল সাহেবের সাথে আমরা কারাভোগ করেছি। তিনি একজন প্রিয় মানুষ এবং প্রিয় সংগঠকও। আমরা তাকে আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, তোফাজ্জল ভাই একজন পন্ডিত পুরুষ ছিলেন, উনি কখনো হতাশ হন নাই। কিন্তু প্রতিনিয়ত তাকে স্ট্রাগল করে কাজ করতে হয়েছে। কাজের ব্যপারে কোন আপোস ছিলো না। একজন সম্পাদক হয়েও তিনি ক্যামেরা হাতে ঘুরেছেন। সে যে একজন মনে প্রাণে সাংবাদিক ছিলেন, সাংবাদিতাকে ধারণ করেছেন তোফাজ্জল হোসেন তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, তোফাজ্জল ভাইয়ের স্বরণ সভা করতে হবে, এটা আমাদের জন্য কাঙ্খিত ছিলো না। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো স্বাভাবিক ভাবেই তোফাজ্জল ভাই আমাদের মাঝে আরও দীর্ঘদিন থাকবেন। স্কুল জীবন থেকে তোফাজ্জল ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়। ছাত্র জীবনে তিনি আদর্শীক একটা ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। উনি যদি উনার বিদ্রোহী মনোভাব না রাখতেন। তাহলে আজকে নারায়ণগঞ্জে উনি একজন নামকরা সাংবাদিক হতে পারতেন। উনার এই বিদ্রোহী মনোভাবের জন্য হয়তো উনি সবার ভালোবাসা অর্জন করতে পারে নাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, তোফাজ্জল ভাই ছিলেন একজন সাহসী সাংবাদিক। উনার মতো যদি সবাই সাহসী ও প্রতিবাদমুখী সাংবাদিকতা করতে পারতো তাহলে হয়তো নারায়ণগঞ্জে গডফাদারদের পদার্পণ হতো না। নারায়ণগঞ্জবাসী একজন কৃতিসন্তান হারিয়েছে। তোফাজ্জল ভাই একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছেন। গডফাদার, সন্ত্রাসী না হয় সেটা তিনি দেখতে চেয়েছেন। আমরা যদি নারায়ণগঞ্জকে একটি সুখি সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তোফাজ্জল ভাইয়ের আত্মার শান্তি পাবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, আমরা আজ এমন একজন মানুষের স্বরণসভায় দাঁড়িয়েছি। যে ব্যাক্তি একজন বিপ্লবী ছিলেন। স্বৈরাচারী আমলে উনি একাই বিপ্লব করেছেন, উনি একজন অক্ষতময় সৈনিক ছিলেন। কোন রিপোর্ট করতে গেলে উনাকে কে কি বললে এগুলোর তোয়াক্কা না করে, ওনার সর্বোচ্চটা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমীর মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, তোফাজ্জল ভাইয়ের স্বরণ সভায় সবাই পজেটিভ কথা বলেছে। কিন্তু নেগেটিভ কেউ বলে নাই। কিন্তু তোফাজ্জল ভাইয়ের ক্ষেত্রে কোন নেগেটিভ প্রযজ্য ছিলো না। ৫ আগস্টে পর আমরা বলেছিলাম সাংবাদিকদের, আপনারা যদি সত্যকে সত্য তুলে ধরতে পারেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো উচ্চারণ করতে পারেন তাহলে আপনার জাতি মুক্তি পাবে। এবং আপনারাও আপনাদের কলমকে স্বাধীনভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন।
সবশেষ প্রয়াত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের স্বরণে তাঁর বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমার বাবা আমাদের ভাই বোনদের সব থেকে মূল্যবান যে সম্পদ সেটা দিয়ে গেছে। সেটা হলো সুশিক্ষা ও সঠিক পথে চলা। আমি দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছি। আপনারা যারা আমার বাবার পাশে ছিলেন, তেমনিভাবে আপনারা আমাদের পাশেও থাকবেন। আমার বাবা দৈনিক ইয়াদ যেভাবে চালিয়ে গেছেন, আমরাও সেভাবে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবো। আজকের আয়োজনের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।