শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
Led01জেলাজুড়ে

বছরের শুরুতে না.গঞ্জে দীর্ঘ লাশের মিছিল, সতেরো দিনে ১৪ লাশ উদ্ধার

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নতুন বছরেও নারায়ণগঞ্জের পিছু ছাড়েনি স্বজনহারা কান্না। আহাজারীতে প্রায় প্রতিদিনই ভারী হয়ে উঠছে একটি এলাকা। একজন-দুজন নয় নতুন বছরে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ৫ জন নিহতের ঘটনাও দেখেছে নারায়ণগঞ্জবাসী। বছরের প্রথম মাসে মাত্র সতেরো দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪টি লাশ। এর মধ্যে আছে হত্যা, আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা ও ২ গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনা। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়।

এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি লাশ উদ্ধারের ঘটনাগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করা হলো..

১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পৃথক দুটি স্থান থেকে দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো (খাদ্যগুদাম) এলাকা থেকে অজ্ঞাত (৪৫) পুরুষ ও একই দিন দুপুরে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের কুতুবপুর থেকে সাইফুল ইসলাম (২৮) নামের আরেক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে লাশ মর্গে পাঠালে ২৮ বছর বয়সী যুবকের পরিচায় শনাক্ত করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে লাশগুলোরশরীরে কোন আঘাতে চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে লাশ দুটি ৪-৫ দিনের আগে হবে। ময়নাতদন্তের পর তাদের মৃত্যুর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

১৫ জানুয়ারি (বুধবার) বন্দরের লাঙ্গলবন্দ বারপাড়া বাগানবাড়ি এলাকা থেকে এক কিশোরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত কিশোর হলেন বন্দরের লাঙ্গলবন্দ বারপাড়া বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শান্ত ইসলাম (১৬)। নিহতের মা আয়েশা বেগম জানান, স্বামী হারা ছেলেকে নিয়ে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ বারপাড়া বাগানবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে থাকেন। ছেলেকে নিয়ে একটু সুখে থাকার জন্য ব্রাক এনজিও থেকে ২ লাখ টাকা লোন নিয়ে দেড় লাখ টাকায় ছেলেকে একটি অটো কিনে দেন। গত ৫ জানুয়ারি বন্দরের সাবদি এলাকায় ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে গেলে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা তাকে ধোকা দিয়ে অটোটি চুরি নিয়ে যায়। এদিকে গত ১০ জানুয়ারি ব্রাক এনজিওর কিস্তি দেয়ার তারিখ ছিল। সময় মত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে নাপারায় এনজিও থেকে চাপ দেয়া হয়। সে এনজিওর চাপ সইতে না পেরে গত মঙ্গলবার গবীর রাতে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

১৩ জানুয়ারি (সোমবার) সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের সামনে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়। নিহতরা হলেন সিটি কর্পোরেশন ১নং ওয়ার্ডের মুজিববাগ এলাকার বাসিন্দা শুভ (২২) ও ইমন (২১)। পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক অটোরিকশাকে ওভারটেক করার চেষ্টাকালে ধাক্কা লেগে তিনজন পড়ে যান। এ সময় একটি ট্রাকচাপা দিলে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। অন্যজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ট্রাকচালককে আটক করা হয়েছে।

১২ জানুয়ারি (রবিবার) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দরে কেওঢালা এলাকার অভিলাশ সিনেমা হলের সামনে বেপরোয়া এক মোটর সাইকেলের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা নারী ভিক্ষুকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বৃদ্ধা হলেন বন্দরের নেহাল সর্দারবাগ এলাকার মৃত ইউনুছ মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৮০)। পুলিশ জানায়, নিহত ফিরোজা বেগম অভাবের তাড়নায় দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে আসছিল। গত রবিবার ভিক্ষার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দ্রুতগামী নম্বর বিহীন মোটর সাইকেল স্বজোরে ধাক্কা দিলে গুরুত্বর জখম হয়। সে সময় স্থানীয় জনতা তাকে আশংকা জনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১২ জানুয়ারি (রবিবার) একই দিন ফতুল্লার কাশিপুরের দেওয়ান বাড়ি এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত নারী হলেন, পশ্চিম দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা রিয়াদ হোসেনের স্ত্রী রাশিদা (৩০)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এঘটনার ভিডিও দেখে যায়, সড়ক পাড় হবার সময় পিছন থেকে একটি ট্রাক এসে রিাশিদাকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ওই নারীর।

৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে ফরিদপুরের গেরদায় মুন্সীবাজার এলাকায় ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নারায়ণগঞ্জের একই পরিবারের ৩ জনসহ পাঁচজন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। নিহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের ভূঁইয়াপাড়া এলাকার কালু ভূঁইয়ার নাতি ও আবু সাঈদ ভূঁইয়ার স্ত্রী আতিফা রহমান ( ৩৬), সাঈদের চাচতো বোন, ভগ্নিপতি ও বন্দর উপজেলার দড়ি সোনারকান্দা এলাকার আলমগীর হোসেনের স্ত্রী উম্মে তাজসুমা(৩০)। এছাড়া আহত হয়েছে, খুলনা আটরা ফকির পাড়া এলাকার শাহ আলমের ছেলে ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভার নাজমুল ( ৩৩), বন্দর উপজেলার বজলুর রহমানের ছেলে সাদিরা আফরিন (৩০), ফরিদপুর কোতোয়ালী গেরদা এলাকার শেখ জালালের ছেলে শেখ জিন্নাহ (৬০) ও তাসরিন (১৬) (অজ্ঞাত)। জানা যায়, দুপুরে মধুমতী এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি খুলনা থেকে ফরিদপুর হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। মাইক্রোবাসটি গেরদা থেকে মুন্সিবাজারের দিক আসছিল। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হয়। আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর পর আরও দুজন মারা যান।

৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) একই দিন ফতুল্লার পিলকুনী পশ্চিমপাড়া এলাকায় শুক্কুর আলীর গ্যারেজে থেকে এক ইজিবাইক চালকের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা চালককে হত্যা করে দুটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। নিহত চালক হলেন নীলফামারী সদরের তালুক মানুষমারা গ্রামের মৃত গফুর মিয়ার ছেলে হারেজ মিয়া (৪৫)। এ ঘটনায় গ্যারেজ মিস্ত্রি খোরশেদ বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় গ্যারেজে এসে দেখি হারেজ কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। তখন তাকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার জন্য ডাকি। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাথা থেকে কম্বল সরাতেই দেখি রক্তাক্ত মরদেহ। এরপর গ্যারেজের মাহজনকে জানাই। মাহজন এসে দেখেন চারটি গাড়ির মধ্যে দুটি নেই। দুর্বৃত্তরা হারেজকে মাথায় ও মুখে আঘাত করে হত্যার পর দুটি ইজিবাইক নিয়ে গেছে।

৩১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ফতুল্লায় বউ বাজার এলাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইটের কনসার্টকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় রক্তাক্ত জখম হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহত তরুণ হলেন গলা বউবাজার মাঠা পট্টি এলাকার হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে হৃদয় (২০)। স্থানীয় ও পুলিশের সূত্রে জানা যায়, রাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে পাগলা বউবাজার রেল স্টেশন সংলগ্ন খেলার মাঠে দুই গ্রুপের লোকজন ডিজে পার্টি ও কনসার্টের আয়োজন করেন। উক্ত ডিজে পার্টি ও কনসার্ট পাশাপাশি দুইটি হওয়ায় গানের শব্দ নিয়ে উভয় গ্রুপে কথা কাটাকাটি একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় গ্রুপের কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদয় মারা যায়।

RSS
Follow by Email