না.গঞ্জে শেখ পরিবারের সাথে জড়িতরা নেতা নন, তারা চোর: গিয়াস
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ১৬ বছর ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছিল। মানুষকে তারা নির্যাতন করেছে, দেশের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। এ দেশটাকে প্রায় ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষকে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিশেষ করে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল এ বিএনপিকে দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকে রক্ত দিয়েছে, অনেকে কারা বরণ করেছে। ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার বৈপ্লবিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তার সাথে মন্ত্রী পরিষদে যারা ছিল, এমপি ছিল, দলের নেতাকর্মী ছিল, সারা দেশের আনাচে-কানাচে যারা সন্ত্রাসী ছিল তারাও পালিয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ বিদেশে পালিয়ে গেলও কিছু দেশে আত্মগোপনে আছে। স্বৈরাচার দেশকে ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই স্বৈরাচার সরকার অবৈধ অর্থ সম্পদ ব্যয় করে বিদেশের মাটি থেকে এই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কিভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে, দেশে কিভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে কিভাবে এই ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত। একের পর এক ষড়যন্ত্র তারা বাংলাদেশের মাটিতে চাপিয়ে দিচ্ছে। ’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সঞ্চালনায় ছিলেন ফতুল্লা থানার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাছান আলী। এসময় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী সুলতান মাহমুদ।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয়দাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম সাদরিল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, বর্তমান সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারী ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. খন্দকার আকতার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাইনুল হোসেন রতন, ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ প্রমূখ
গিয়াসউদ্দিন বলেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত, যারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করেছে। স্বৈরাচার সরকার ভারতের তাবেদারি করেছে। ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। সেই স্বৈরাচারী সরকার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ভারত সেটা কি এখনো মেনে নিতে পারে নি। সেই কারণে তারা ষড়যন্ত্র করছে। কি করে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা যায়, বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি করতে পারে সেই চেষ্টায় তারা লিপ্ত। আমাদের হিন্দু ভাইদের ব্যবহার করে এই দেশের দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহ অবস্থানে বসবাস করার দেশ বাংলাদেশ। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মুসলমান আমরা একসাথে বসবাস করেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আমরা সবাই পাকিস্তানি বাহিনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নাই, কোন বিরোধ নেই। যার যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে পালন করবে। এটাই আমরা চাই।
তিনি বলেন, যারা অর্থ অবৈধভাবে উপার্জন করে বড়লোক হয়েছে, দুর্নীতি করে ধনী হয়েছে তাদের আমরা এখন সম্মান করি। তাকে ওয়াজ মাহফিলে মাওলানা সাহেবের পাশে বসাই। এই খারাপ মানুষটা সম্মান পেয়েছে অর্থের কারণে। সে বেপরোয়া হয়ে যায়, কিভাবে সে অন্যায় ভাবে অর্থ লুণ্ঠন করবে। আমরা ছেলেরা তখন ভাবি, তার মতো করে যদি বিত্তশালী হতে পারি তাহলে সম্মান পাওয়া যাবে। একজন সাধারন মানুষ সহজ জীবন যাপন করে, তাকে যদি আমরা সম্মান দেই আমাদের ছেলেরা ভাববে, যদি আমি ভালো মানুষ হতে পারি তাহলে সম্মানের চেয়ারে আমি বসতে পারবো। তাহলে অবশ্যই আপনার আমার ছেলে সৎ পথে চলার চেষ্টা করবে। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। এখন অনেকের শক্তি আছে, বাহুবল আছে বলে অন্যায় অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। যারা অসহায় তাদের কোন শক্তি নাই, তারা নির্যাতিত হচ্ছে। আমরা জোর দিব যাতে, এই সাধারণ মানুষ গুলো ন্যায় বিচার পায়। বিচার করার মতো যারা ভালো মানুষ, সৎ মানুষ তাদেরকে দিয়ে আমরা পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে বিচার কমিটি গঠন করব। তাদের পিছনে থেকে আমরা শক্তি যোগাবো যাতে তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমরা চেষ্টা করব মাদককে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করে দিতে। মাদক আমাদের সমাজ আমাদের দেশ আমাদের সন্তানকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। ২০০১ সালে যখন আমি এমপি হই সবার একটি অভিযোগ ছিল। চারদিক শুধু মাদক আর মাদক। মাদক নির্মূল করতে আমার দলের নেতাকর্মীকেও ছাড় দেই নাই।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের যারা দোসর ছিল তাদেরকে কোন অবস্থায় সমাজে ঠাই দেওয়া যাবে না। আমার দলের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদেরকে বলবো, আপনারা যদি আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী,ঘুষ-উৎকোচের বিনিময়ে তাদেরকে আপনাদের সাথে নেন, তাহলে আপনাদেরকে রেহাই করা হবে না। তারা অন্যায় করেছে, তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। তারা অন্যায় করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা নাই। স্বৈরাচারী হাসিনা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা নিজে শেষ হয় নাই, তার পরিবার শেষ হয় নাই, নিজের বাপ মাকে শেষ করে নাই। শেখ হাসিনা শেষ করে গেছে বাংলাদেশকে। শেষ করে গেছে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে শেষ করে গেছে। শেখ হাসিনার প্ররোচনায় যারা কাজ করবে তাদেরকে ভেঙে ভেবে দেখতে হবে আগামী দিন তাদের কি হবে। আমার মনে হয় এত বোকামি করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে শেখ পরিবারের রাজনীতি করার আর সুযোগ নাই। তারা এ দেশের সম্পদ চুরি করেছে লুট করেছে। এই পরিবার হচ্ছে একটা চোর পরিবার। এ পরিবার আবার কিভাবে বাংলাদেশে আসবে রাজনীতি করতে। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে এ পরিবারের সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের কাউকে নেতা বলা যাবে না। তাদেরকে চোর বলতে হবে। এই চোরেরা নারায়ণগঞ্জে কোনদিন দাঁড়াতে পারবে না। জনগণ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ক্ষোভে তারা এখন জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করছে।