প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিলো আর.পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়
# প্রথমবারের মতো পেয়ে আমি খুব খুশি ও গর্বিত: শিক্ষার্থী
# শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখবো: শিক্ষক রনীত
# তোমাদর সফলতা অভিভাবকদের ত্যাগ-শিক্ষকদের প্রচেষ্টার ফসল: ড. মনীন্দ্র কুমার
# জীবণে সফল হতে হলে বই পড়: ডিসি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের পঞ্চাশটির বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭ শতাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে বট তলায় ওই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাসে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি পালিত হয়।
এদকে,সকাল থেকেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে ভিড় জমাযতে শুরু করে। মূহুর্তে প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাসে পুরো ক্যাম্পাস উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। অভিভাবকরা গর্বিত আমেজে সন্তানদের নিয়ে হাজির হয় রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলা প্রাঙ্গণে। দুই পর্বের অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা দিয়ে শুরু হয় সংবর্ধনার আয়োজন। সভায় পাঁচ শতাধিকের বেশি শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অতিথিরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। পরে আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাফল্য উদযাপন করে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানায়।
রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়ের সভাপতিত্বে এ সময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমুদিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের সম্মানিত পরিচালক মহাবীর পতি, আরপিএসইউ এর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. রবীন্দ্র নাথ শীল, ব্যবসায় অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. গোপাল চন্দ্র সাহা , প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. কিংকর প্রসাদ ঘোষ, আইকিউএসি এর পরিচালক প্রফেসর ড. মো নাজমুল হাসান, কুমুদিনী স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. শেখ আব্দুর রহিম, আইন ও মানবাধিকার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সেলিনা আক্তার, প্রক্টর কাজী লতিফুর রেজা, রেজিস্ট্রার সরকার হিরেন্দ্র চন্দ্র, ডেপুটি রেজিস্ট্রার অমিত রায় এবং ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা মো. আসাদুজ্জামান, সরকারি তোলারাম কলেজের প্রিন্সিপাল ড. বিমল চন্দ্র দাস, গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল মীর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন, সরকারি আদমজীনগর এম ডাব্লিও কলেজের অধ্যক্ষ মো. সোলায়মান খন্দকার ও ভারতেশ্বরী হোমস’র প্রিন্সিপাল মন্দিরা চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ স্টার ফ্লাওয়ার শাহ আলী রফিকুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাজী মিসির আলী কলেজ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকমন্ডলী।
সংবর্ধনা পেয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে সংবর্ধণা অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। এই ক্যাম্পাসটা আমি চিনতাম না, অনেক সুন্দর একটা ক্যাম্পাস। আমরা এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি বলেই সংবর্ধনা দিচ্ছে আমাদের। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার বন্ধুদের সাথে এসেছি। এই সুবাধে আরেকবার বন্ধুদের সাথে দেখা করার সুযোগ পেলাম। রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের একটা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দিয়েছে। প্রথমবারের মতো পেয়ে আমি খুব খুশি ও গর্বিত। সংবর্ধনা দেয়া সত্যিই একটা ভালো সিদ্ধান্ত। আসলে আমাদের ভালো বন্ডিংয়ের কারণে আমরা এতো ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আমাদের মেধার মূল্যায়ন করেছে এর জন্য রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উনারা আসলেই সত্যিকার অর্থে মেধার মূ্ল্যায়ন করতে পেরেছে।
রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত জানান, আর.পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এমন কর্মসূচি আমাদের প্রতি বছর থাকবে। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে আমরা এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবো। শিক্ষার্থীরা খুব খুশি আমাদের ক্যাম্পাস দেখে।
রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায় বলেন, প্রতিটি সফলতার পিছনে থাকে স্বপ্ন। আর স্বপ্ন সেটি নয় যেটি মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটি যেটা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ঘুমাতে পারেনা। তোমাদের প্রত্যেকের ভিতর লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনা, সৃজনশীল শক্তি। যা সমাজ, জাতি, দেশ এমনকি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে। আর শিক্ষা তোমাদের সেই দ্বার উন্মোচন করে। আমি বিশ্বাস করি তোমাদর আজকের এই সফলতা তোমাদের অভিভাবকদের ত্যাগ এবং শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বীপ্ত করতে আমরা সাধারণত বিশ্বের ফসল উদ্যোক্তা এবং সম্পদশালী ব্যাক্তি যেমন-ইলন মাস্ক, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটসের উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমরা কখনও আমাদের রত্নগর্ভা ভূ-খন্ডের বিজ্ঞানী, বিখ্যাত সাহিত্যিক বা উদ্যোক্তাদের নাম বলিনা। আমাদের আছে মার্কারি নাইট্রেডের আবিষ্কারক প্রখ্যাত রসায়ন শাস্ত্রবিদ স্যার আচার্য প্রফুল- চন্দ্র রায়, বেতার তরঙ্গের জনক বিশিষ্ট পদার্থবিদ, প্রাণীবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বোস-আইনষ্টাইন পরিসংখ্যান তত্বের অন্যতম আবিষ্কারক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্যোতি ও পদার্থবিদ্যাবিদ মেঘনাথ সাহা, নোবেল বিজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অর্মত্য সেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, আছেন সফল উদ্যোক্তা বিজিনেস ম্যাগনেট, শিক্ষানুরাগী রায় বাহাদুর আর পি সাহার মত সফল মানুষ যাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, জীবণে সফল হতে হলে বই পড়। অবৈধ পন্থায় টাকা রোজগারের পিছনে ছুটতে হবে না। অন্যের মাথা ভেঙে টাকা ইনকাম করার লাগবে না। অন্যকে ঠকিয়ে জীবণ গড়ার লাগবে না। জীবণ গড়ে তুলতে অধ্যয়ন করো। তোমার আশেপাশের মানুষ চমকে উঠবে। তোমার ক্লাসমেট হয়ত জানে না, তুমি রাতে কিংবা ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে অনেক অধ্যয়ন করো। একসাথে হাটছো, ক্লাসে যাচ্ছো ও খেলাধুলা করছো। কিন্তু প্রতিদিন রাতে তুমি দশ পৃষ্ঠা করে বই পড়ছো। পাঁচ বছর পর, তোমার সাথে যে আড্ডা দিচ্ছে, সে মানুষটার সাথে তোমার বিশাল তফাত হয়ে যাবে। এটি এক বছরে নয়, ছয় মাসে নয়, কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঠিকই বোঝা যায়।