নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে শীতের কাপড়ের বেচাকেনা
# ‘শীতের প্রথম দিকে পোশাক বেচাকেনার হিড়িক পড়ে’
# ‘সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় জমে’
# ‘ফুটপাথে সাশ্রয়ী দামে বাছাই করে ভালো পোশাক নেয়া যায়’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কার্তিক পেরিয়ে শুরু হয়েছে অগ্রহায়ণ। হেমন্তের মৌসুম শেষ হতে সময় বাকি থাকলেও প্রকৃতিতে এখনই উকি দিচ্ছে শীতকাল। নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশেই শীতের আমেজ বাড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট। শহরাঞ্চলে সকালের দিকে হালকা কুয়াশার দেখা মিললেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বিলীন হয়ে যায়। তবে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে এসেছে, বাতাস শুষ্ক হয়ে উঠছে। পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আসায় মানুষের পোশাক-আশাকেও আসছে পরিবর্তন। কানটুপি, হাত মোজা, সোয়েটার, জ্যাকেটসহ নানান গরম কাপড় পড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। দিন দিন শীতের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে শীতের কাপড়ের বেচাকেনা। ফুটপাথ থেকে নিয়ে বিভিন্ন বিপণি-বিতানে ব্যবসায়ীরা শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরে শীতের পোশাক বেচাকেনা জমে উঠেছে। চাষাড়া হকার্স মার্কেট, সলিমুল্লাহ রোড, বঙ্গবন্ধু রোড, শায়েস্তা খাঁ রোডসহ নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে সড়কের পাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পোশাকের পসরা বসিয়েছেন। ছোট বাচ্চা, তরুণ-তরুণী, মুরুব্বিসহ প্রায় সব বয়সীদের জন্য মিলছে গরম কাপড়ের পোশাক। নতুন, পুরাতন উভয় ধরণের পোশাক মিলছে এইখানে। রঙিন সোয়েটার, ডেনিম-লেদার জ্যাকেট,উলের হাত মোজা পায়ের মোজা, কানটুপি, গায়ে দেবার শালসহ নানান পোশাকে সাজানো হয়েছে দোকানগুলো। চাষাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হকার্স মার্কেটের সামনে বেশ কয়টি দোকানে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। দোকানগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। হাত দিয়ে বাছাই করে পছন্দের পোশাক কিনছেন কেউ কেউ। আবার পছন্দ না হলে অন্য একটি দোকোনে যাচ্ছে। কেউ নিজের জন্য, কেউ সন্তানের জন্য অথবা কেউ বাবা-মায়ের জন্য পোশাক ক্রয় করছেন।
সকাল থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় জমে উঠে দোকানগুলোতে, এমনটাই বলছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, শীতের মৌসুম উপলক্ষে বিভিন্ন ধরণের পোশাক মজুদ করা হয়েছে। হালকা ঠান্ডা পড়ায় মানুষের শীতের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। শীতের প্রথম দিকে পোশাক কেনাবেচার হিড়িক পড়ে। শীত শেষ হতে হতে ক্রেতাদের পোশাকের চাহিদা কমে যায়। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ভিড় করেন দোকানগুলোতে। দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা, চায়না, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক রয়েছে বিক্রেতাদের কাছে। ক্রেতাদের সাথে কথা হলে জানান, ঠান্ডা পড়ায় শরীরকে উষ্ণ রাখতে শীতের কাপড় প্রয়োজন। মার্কেট, ফুটপাথ দুই জায়গাতেই শীতের জন্য গরম কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে। মার্কেটগুলোতে কাপড়ের দাম বেশি থাকে। ফুটপাথে নতুন, পুরাতন বিভিন্ন রকমের কাপড় পাওয়া যায়। এসব দোকানে সাশ্রয়ী দামে বাছাই করে ভালো কাপড় নেওয়া যায়।
চাষাড়ায় দীপ হোসাইন ফাহিম নামে এক বিক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীতের প্রথম দিকে বেচাকেনার ধুম পরে। এই সময়টাতে ভালো বিক্রি হয়, শীতের শেষের দিকে পোশাক বিক্রি কম হতে থাকে। এবার চায়না, ফিলিপাইন থেকে ফুল স্লিভ ভেলভেট টি শার্ট এনেছি। তরুণদের মধ্যে এর বেশ চাহিদা রয়েছে, তাই বিভিন্ন ডিজাইনের ভারী কাপড়ের টি শার্ট সংগ্রহ করেছি। বেচাকেনা ইদানিং ভালো হচ্ছে।
মো. সাইফুল ইসলাম নামে অপর এক বিক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীত আসছে বলে সোয়েটার, জ্যাকেট, মোটা কাপড়ের ফুল স্লিভ টি শার্টসহ বিভিন্ন শীতের পোশাক বিক্রি করছি। বিকাল ৪টা থেকে এইখানে বসি রাত ১০টা পর্যন্ত। আমাদের কাছে ছোট, বড় সব ধরণের সাইজের কাপড় আছে। বাচ্চা, নারী, পুরুষ সব বয়সের ও সব সাইজের কাপড় আছে। নিজের মতো করে ক্রেতাদের বেছে নিতে হবে। মার্কেট থেকে যে মোটা কাপড়ের গেঞ্জি পাঁচ থেকে সাত‘শ টাকা রাখবে, সেটা আপনারা এইখানে এক‘শ টাকায় পাবেন। শীতের সিজনে আমরা এই পোশাক বিক্রি করি। বাইরের থেকে কাপড় আসলে বেশির ভাগ কাপড় পাইকারীতে বিক্রি হয়। এছাড়াও আরেকটি অংশ ফুটপাথে বিক্রি হয়।
মা ও মেয়েকে নিয়ে ফুটপাথে গরম কাপড় দেখছেন শিমু আক্তার। কাপড় দেখার মাঝে লাইভ নারায়ণগঞ্জকে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে বলেছে, এবার নাকি শীত বেশি পড়বে। তাই আমার মেয়ের জন্য শীতের পোশাক কিনবো। সন্ধ্যায় আমার মা ও মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছি। শীতের কাপড় ফুটপাথ থেকে কেনা হয়। রিভারভিউ মার্কেট থেকেও কেনা হয়। বড় বড় শপিংমলের চাইতে ফুটপাথেই কাপড় বেশি কেনা হয়। এখন চাষাড়ায় দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছি। এইখানে কম দামে ভালো কাপড় পাওয়া যায়। দুটো দোকানে কাপড় দেখেছি। সামনে কয়েকটা দোকান দেখা বাকি। বাছাই করে কোন কাপড় ভালো লাগলে কিনবো।
ফুটপাথের একটি স্টলে লেদার জ্যাকেট বাছাই করতে করতে জাহাঙ্গির নামে এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, জীবিকার তাগিদে আমি বহুদিন যাবত ইউরোপে বসবাস করছি। দেশে এসেছি কিছু দিন আগে, বিদেশে আবার ফিরতে হবে। সেখানে অনেক ঠান্ডা, তাই এখান থেকেই শীতের পোশাক নিয়ে নিচ্ছি। আমি নিজ দেশের পোশাক প্রেফার করি, বিদেশি পোশাক খুব কম পড়ি। মূলত, আমাদের দেশের তৈরী পোশাকই বিদেশে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডিং, সিল দিয়ে শুধু দাম বেড়ে যায়।
লতা দেবনাথ নামে এক তরুণী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীত নেমেছে, তাই শীতের জন্য গরম কাপড়ের পোশাক কিনতে হবেই। বাবা-মায়ের জন্য পোশাক কেনাকাটা করতে হবে। তাই মাকে সাথে নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছি। ফুটপাথে দামের তুলনায় ভালো শীতের কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি কালেকশনও আছে। সময় নিয়ে বাছাই করে কাপড় নিতে হয়।
তাসমিয়া আক্তার নামে এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীত এসে পড়েছে, তাই বাচ্চাদের ও স্বজনদের জন্য গরম কাপড় কিনতে বেরিয়েছি। ফুটপাথ ও শপিংমল দুই জায়গাতেই পোশাকের কেনাকাটা হয়। পছন্দমতো স্বল্প দামে ভালো কাপড় নেয়ার চেষ্টা করি। চাষাড়ায় ফুটপাথে দোকানগুলো দেখছি। ভালো কাপড় পেলে নেওয়া হবে।