নিষিদ্ধ হলেও না.গঞ্জে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ
# ‘পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যাগ বাজারে দেখি নাই’
# ‘ক্রেতাদের প্রয়োজন না হলে, আমরা পলিথিন ব্যাগ রাখবো না’
# পলিথিন উৎপাদনকারীর ঠিকানা পেলেই অ্যাকশন নেব: অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
# পলিথিন সরবরাহের জন্য পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পরিবেশ অধিদপ্তর
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সারা দেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়, তুলাসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের কাঁচাবাজারে নিষেধাজ্ঞা না মেনেই অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। খালি হাতে বাজার করতে আসছেন ক্রেতারা। সবজি, ফল, মাছ কিংবা মাংস ক্রয়ের পর পলিথিন ব্যাগে করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। নিষেধাজ্ঞা জানা সত্ত্বেও পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করছেন তারা। ‘ক্রেতারা খালি হাতে আসছে, তাই পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছি’ বলে দায় সারা জবাব দিচ্ছেন। আবার ক্রেতারাও পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন ব্যাগ নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, পলিথিন যে নিষিদ্ধ হয়েছে সেটাই জানি না।
শনিবার (২ নভেম্বর) সদর থানার বৃহৎ দ্বিগুবাবুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুল কপি, পেপে, পুই শাক, লাল শাক, লাউ, শশা, টমেটো, গাজর, কলা, আপেল, মাল্টা, আনারসহ বিভিন্ন রকমের সবজি ও ফল বহন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতের ব্যাগ। ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, পণ্য সামগ্রী বহন, সংরক্ষণে পলিথিনের কোন বিকল্প কল্পনাই করা যায় না। মাছ-মাংস বাজার থেকে বাসায় বহন করতে পলিথিন ছাড়া অন্য কিছু বিকল্প হতে পারে তা জানা নেই। বিক্রেতারা জানান, পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে জানা আছে। কিন্তু এর বিকল্প পণ্য আমাদের হাতের নাগালে নেই। ক্রেতারাও কোন ব্যাগ নিয়ে আসেন না। তাই পণ্য বিক্রির পর তা বহন করতে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে।
বিক্রেতা আলমগীর বলেন, পলিথিন বিশ বছর আগেও নিষিদ্ধ হয়েছিল। এখন আবার নিষিদ্ধ হয়েছে। পলিথিন ব্যাগ ছাড়া অন্য কোনভাবে সবজি দিতে পারছি না। ক্রেতারা কোন ব্যাগ সাথে আনে নাই। ক্রেতাদের প্রয়োজন না হলে, আমরা পলিথিন ব্যাগ রাখবো না।
অপর বিক্রেতা মোহসীন বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এর বিকল্প ব্যাগ কেউ নিয়ে আসছে না। আমি পেপে, কুমড়া, লাল শাক সবজি বিক্রি করছি তা খালি হাতে বহন করা সম্ভব না। তাই পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছি ক্রেতাদের। সকালে পলিথিন ব্যাগ খুচরায় কেজিতে ২৪০ টাকায় কিনছি। অন্য কোন বিকল্প ব্যাগ কাউকে বিক্রি করতে দেখি নাই। পলিথিন আগে কারখানা থেকে বন্ধ করতে হবে। তাইলে বাজারে সাপ্লাই হবে না।
বাজার করতে আসা রাসেল লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, পলিথিন যে বাজারে নিষিদ্ধ হয়েছে তা জানা নেই। পলিথিনের কোন বিকল্প ব্যাগ বাজারে কোথাও বিক্রি হতে দেখি নাই। বাড়ির জন্য কিছু সবজি নিয়েছি। আমার সাথে কোন ব্যাগ নাই বলে দোকানদার পলিথিনে করে সবজি দিয়েছে।
বন্দরের বাসিন্দা আশিক বলেন, পলিথিন পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেটা আমরা কম বুঝি। তাই নিষেধাজ্ঞার পরও বাজারে কোন পরিবর্তন আসে নি। মূলত, পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বাজারে পলিথিন আসা বন্ধ হবে। আমি ঢাকায় যাতায়াতের সময় একটা পাটের ব্যাগ সংগ্রহ করেছি, তা দিয়েই বাজার করা হয়। আজকে ফল নিয়েছি, অন্য কোন ব্যাগ নাই বলে বাধ্য হয়ে পলিথিনে করেই তা বহন করছি।
এদিকে, রবিবার (৩ নভেম্বর) থেকে নারায়ণগঞ্জে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বাজার, পণ্যের গুদামসহ সকল স্তরে অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে সতর্কতামূলক কার্যক্রম পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। আগামীকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে বাজারে, পলিথিন বিক্রয়কারী, পণ্যের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পলিথিন ব্যাগ রাখা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে জরিমানাসহ আইনীভাবে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন উৎপাদন যদি হতে থাকে, বাজারে তার সরবরাহ হবেই। এব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি, নারায়ণগঞ্জে কোথায় পলিথিন উৎপাদন হয়। নারায়ণগঞ্জে এখনও কোন উৎপাদনকারীর ঠিকানা পাই নাই। তাদের ঠিকানা পেলেই অ্যাকশন নেওয়া হবে। এছাড়াও, ব্যাবসায়ীরা গুদামে করে পলিথিন ব্যাগ সংরক্ষণ করছে এমন তথ্য পেলেই সেখানেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকার থেকে পলিথিন বন্ধের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। পলিথিন বন্ধ, এরপরে আর কোন কথা নাই। পলিথিন আগেও নিষিদ্ধ হয়েছিল, সেসময় মানুষ ভালোভাবে চলেছে। এবারও পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার পর মানুষ দুই এক দিনের মধ্যে অভ্যস্থ হয়ে যাবেন। এর জন প্রয়োজন সময়, এক দিনের ভিতরেই সবকিছু সম্ভভ না। মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন হতে সময় লাগে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরী হয়ে যাবে। একসময় পলিথিন ছিল না, তখন মানুষ জীবনযাপন করেছেন। সামনে ঠিকই মানিয়ে নিবে, মানুষ আরও বেশি সচেতন হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ‘র উপপরিচালক এএইচএম রাসেদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পলিথিন উৎপাদনকারী রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পলিথিন উৎপাদনকারীদের কোন তথ্য এখনও পাইনি, আমাদের অনুসন্ধান চলছে। শুক্রবার আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি নি। আগামীকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের বাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। পলিথিন ব্যাগ সরবরাহের জন্য পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনীব্যবস্থা নেওয়া হবে।