না.গঞ্জে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা, অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি সাড়ে ৪‘শ জন
# নভেম্বরের এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়তে পারে: জেলা সিভিল সার্জন
# গত মাসের তুলনায় হাসপাতালে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে: ডা. মো. আবুল বাসার
# রোগীকে প্রচুর পানি-লেবুর শরবত খেতে হবে: ডা. জহিরুল ইসলাম
# ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে ৩৯ টি হটস্পট চিহিত করেছি, সেখানে কাজ করবো: এনসিসি সিইও
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে সদর উপজেলার সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল। এ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। হঠাৎ জ্বর, শরীর ব্যাথা ও সাথে বমি বমি ভাব হলেই হাসপাতালে ছুটছে নগরবাসী। ডেঙ্গু টেস্ট পসিটিভ হলে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল ও ৩০০ শয্যা হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে নারায়ণগঞ্জ শহরে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪‘শ জন। এর আগের মাস, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ১‘শ ৮০ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণ নভেম্বর পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে। তাই সকলকে সতর্ক হতে হবে, শরীরে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিলে অবহেলা না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা নিতে হবে। পরিবারের কারও জ্বর হলে নিকটবর্তী চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে ডেঙ্গু পর্রীক্ষা করাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন রকম ঔষধ সেবন করা উচিত হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, গতবছরের তুলনায় ডেঙ্গু সংক্রমণের মাত্রা বেড়েছে। শুরুতে আমরা ধারণা করেছিলাম, অক্টোবর আসার আগ দিয়ে ডেঙ্গু সংক্রমণের মাত্রা কমবে। পরিস্থিতি পর্যক্ষেবক্ষণ করে আমরা ধারণা করছি, নভেম্বরের এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। আমাদের সকল সরকারি হাসপাতালে ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য যথেষ্ঠ ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত বা এফেকটেড অঞ্চল হলো সদর উপজেলা। এর মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের মাত্রা বেশি সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলে।
৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্তাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. মো. আবুল বাসার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, গত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৮ জন। অক্টোবর মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা দুই শত পেড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ, গত মাসের তুলনায় হাসপাতালে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১২ জন হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। আজকে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
তিনি আরও বলেন, সকলের উদ্দেশ্যে বলবো বাড়িতে কারও জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাবেন। এনিয়ে কোন প্রকার অবহেলা করবেন না। এবছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে, তাই আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবারের কারও জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিলে,গায়ে ব্যাথা থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। ডেঙ্গু টেস্ট না করে কোন ঔষধ খাবেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আরএমও ডা. জহিরুল ইসলাম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, হাসপাতালে গত তিন মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরে ভর্তি হয়েছে ১০২ জন। আর চলতি মাস, অক্টোবরে ভর্তির সংখ্যা ২৫৮ ছাড়িয়ে যাবে। আজকে হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছেন ৩০ জন, গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক ভয়ানক হয়ে উঠছে। হাসপাতালে যতজন ভর্তি হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি চিকিৎসা নিতে আসছেন। রোগীদের নিয়ে আমাদের প্রায় সকল স্পেস ফিলআপ হয়ে আছে। কেউ ছাড়পত্র নিয়ে বেরিয়ে গেলে সেখানে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। ডেঙ্গু জ্বর শরীরে র্যাশ হয়, বমি হয় ও ব্লাড প্রেসার কমে যায়। তাপমাত্রা বাড়ার জন্য শরীর শুষ্ক হয়ে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। রোগীকে প্রচুর পানি, লেবুর শরবত খেতে হবে। মাথাব্যাথা, অস্বস্তি বেশি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ টি অঞ্চলকে আমরা ডেঙ্গু সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছি। আমাদের দৈনিক মশক নিধন কাজের পাশাপাশি এই হটস্পটগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ, এডিস মশা জন্ম নেয় এমন অঞ্চলে আমরা কাজ করবো। নোংরা জায়গা পরিষ্কার ও এডিস মশার বাসস্থান দূর করবো।