না.গঞ্জ চেম্বারের এজিএম বয়কট ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক পরিষদের আহ্বান করা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বয়কটের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে একই সংগঠনের কয়েকজন সদস্য ও ব্যবসায়ীরা। সংঠনের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন তারা। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর চাষাঢ়ায় একটি রেস্তোরাঁয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নিজেদের নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সদস্য বলে পরিচয় দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যবসায়ী সংগঠনটির সদস্য গোলাম সারোয়ার সাঈদ। এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের সদস্য সাহেবউল্লাহ রোমান, গোলাম হায়দার কবির, সাফায়েত হাসান, মো. নিজামউদ্দিন, নাসির উদ্দিনসহ অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী।
সাঈদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, তাদের বিরক্ত করা যাবে না। তবে যারা ব্যবসার নাম করে বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, দেশের সম্পদ লুটপাট করেছেন, বিগত সরকারের নেতাকর্মীদের অর্থপাচারে সহযোগিতা করছেন, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন, তাদেরকে কোনভাবেই ক্ষমা করা হবে না। আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনে ফ্যাসিবাদের প্রেসক্রিপশনে যারা এতদিন দখল করে রেখেছিল তাদেরকে দায়িত্বে রাখা যাবে না। ব্যবসায়িক সংগঠনগুলিতে ব্যবসায়ীদের দ্বারা ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে নেতা তৈরি করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের আগে সভাপতি ছিলেন খালেদ হায়দার খান কাজল। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাজল পদত্যাগ করলে পরিচালক পরিষদের সিদ্ধান্তে সভাপতি হন মডেল ডি ক্যাপিটাল নামে পোশাক কারখানার মালিক মো. মাসুদুজ্জামান।
বিদ্যমান পরিচালনা পরিষদ প্রসঙ্গে গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, ‘আমাদের উদারতার সুযোগ নিয়ে অতি চাতুর্যতার সাথে ফ্যাসিবাদের দোসর সোহেল গং (মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল) মাসুদুজ্জামানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কো-অপ্ট করেন। সেই সাথে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনি পরিবারের ব্যক্তিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদায়ন করেছেন। আমরা জানি না এ বিষয়ে ত্বকী মঞ্চ নিরব ভূমিকা পালন করছে কেন? খুনি পরিবারের সদস্যকে এত বড় একটি দায়িত্বে রেখে ন্যায় বিচার সম্ভব হবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকে যায়।’
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই ভদ্রলোক চেম্বারকে তার পৈত্রিক সম্পদ মনে করে। যেকোনো সদস্যের অধিকার আছে সংগঠনের গঠনতন্ত্র নেওয়ার। কেননা সংগঠনের কাজ কি এবং সংগঠনে তার দায়িত্ব কী তা তো জানার অধিকার আছে। কিন্তু গঠনতন্ত্র উনি কাউকে দেন না। আর মোর্শেদ সারোয়ার তো তার যোগ্যতায় এই পদে আসেন নাই। সেলিম ওসমানের সমর্থনে, ওসমান পরিবারকে ম্যানেজ করেই তারা ছিলেন।’
বক্তব্যে চেম্বারের বর্তমান সভাপতির ব্যাপক সমালোচনা করেন সাঈদ। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে মাসুদুজ্জামান সাহেব নিজেকে সুপারহিরো ভাবতে শুরু করেছেন। স্ট্যান্টবাজিতে শামীম ওসমানকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করলেন কে বা কারা তার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে গেছে। তিনি সেই টাকা ফেরত চাইলেন এবং কিছুদিন পরে পুনরায় সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করলেন চাঁদাবাজির টাকা তিনি উদ্ধার করেছেন। অথচ তিনি চাঁদাবাজদের নাম ঠিকানা কিছু বলেনি। তার এই বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জবাসী এবং ব্যবসায়ী মহল বিস্মিত হয়েছে। কে চাঁদা নিয়েছিল এবং কারা ফেরত দিয়ে গেছে তা সভাপতিকে প্রমাণ করতে হবে।’
চাঁদা প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে সাঈদ বলেন, ‘অভিযোগের তীর যেহেতু বিএনপির দিকে, বিএনপি নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে, তারা কি চাঁদাবাজির টাকা নিয়েছেন, নাকি কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। গণঅভ্যুত্থানের বেনিফিসারি বিএনপি-জামায়াত, তাই শহীদদের রক্তের সাথে কোনভাবে বিএনপি বেইমানি করবে না, এটা বিএনপিকে জাতির সামনে নিশ্চিত করতে হবে।’
‘চাঁদার অভিযোগ বিএনপির দিকে’ এই তথ্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নিয়েছে বলিনি কিন্তু অভিযোগের তীর বিএনপির দিকে। ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াত ব্যাকফুটে ছিল, এখন তারা ফ্রন্টলাইনে আছে। বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর এইটা তাদেরই ক্লিয়ার করতে হবে।’
শনিবার চেম্বারের এজিএম আয়োজন করা হয়েছে। এই এজিএম প্রত্যাখ্যান করেছেন জানিয়ে সাঈদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা চেম্বার অব কমার্সে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে নিজস্ব বলয়ের কিছু ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে আগামীকাল (শনিবার) চেম্বার অব কমার্সের এজিএম করতে যাচ্ছেন। গঠনতন্ত্রের আলোকে কমপক্ষে সাত দিন পূর্বে সাধারণ সভার নোটিশ সকল সদস্যদের কাছে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু তিনি সুকৌশলে তার বলয়ের লোকের বাইরে কাউকে দাওয়াত দেননি, আমি নিজেও চিঠি পাইনি।’
বিদ্যমান পরিচালনা পরিষদের পদত্যাগ, বিএনপি নেতাদের সুস্পষ্ট বক্তব্যসহ চারটি দাবি জানান এ ব্যবসায়ীরা।