যুবদল কর্মী শাওন হত্যার ২বছর পর মামলা
# মামলায় নেই র্যালিতে বাধা নেয়া পুলিশ কর্মকর্তার নাজমুলের নাম
# কাগজে স্বাক্ষর নেয়, পরে জানলাম আমি নাকি মামলা করেছি: বাদী
# সেদিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েও মামলা করতে ব্যর্থ হয়েছি: টিপু
# মামলা হয়েছে, মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো: ওসি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে পুলিশের গুলিতে শাওন আহাম্মদ ওরফে রাজা নামে এক যুবদল কর্মী নিহতের ঘটনার দুই বছর পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে নিহতের বড় ভাই মিলন মিয়া বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডের থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় নারায়ণগঞ্জের সদ্য সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এছাড়া তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামী করা হয়।
প্রসংঙ্গত, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা মিলনায়তনের সামনে থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা একটি বিশাল র্যালি বের করার উদ্দ্যেশে, নগরীর আলী আহম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন পাঠাগারে জড়ো হয়। পরে সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ‘ক’ সার্কেলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান ও সদর থানার ওসিসহ একটি টিম সেখানে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে একপি র্যালি বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার সমুক্ষিণ হয়। কিন্তু নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে একটি র্যালি বের করে, র্যালিটি নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ প্রথমে লাঠি চার্জ করে। পরে নেতৃবৃন্দ ইট পাটকেল ছুড়লে পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনার এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই মাহফুজুর রহমান কনক ম্যাজিস্ট্রেটের বিনা উপস্থিতিতে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে একের পর এক গুলি বর্ষণ করলে যুবদল কর্মী শাওন আহাম্মদ রাজা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সে সময় আহত হন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের আরও ২৫ নেতাকর্মী। গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
মামলার বাদি মিলন মিয়া বলেন, আমার ভাই শাওন ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র্যালিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট একটি ঘটনা ছিল। কিন্তু পুলিশ ঘটনার পর প্রথমে আমার ভাইকে যুবলীগ কর্মী বানাতে চেয়েছিল। সেটিতে ব্যর্থ হয়ে ভাইয়ের লাশ আটকে রেখে লাশ হস্তান্তরের কথা বলে আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে জানতে পারি আমি নাকি বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। পরে আমি আদালতে মামলাটির বিষয়ে নারাজি দিলে পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঐ সময় আমার পরিবারকে পুলিশ জিম্মি করে রেখেছিল। যে কারণে আমি ঐ সময় ভাই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারিনি। এখন দেশের রাজনেতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি এই সরকারের আমলে ভাই হত্যার ন্যায় বিচার পাবো।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, সেদিন পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিএনপির র্যালিতে গুলিবর্ষণ করে যুবদল কর্মী শাওনকে হত্যা করে। পুলিশের গুলিতে সেদিন আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছিল। এরপরেও পুলিশ নিহতের ভাই মিলনকে জিম্মি করে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য করে। এর বাইরে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধার অভিযোগ এনে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। আমরা সেদিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েও ন্যায় বিচারের আশায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়েছি। এখন ন্যায় বিচারের আশা করছি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনর্চাজ) নজরুল ইসলাম লাইভ নারায়ণগঞ্জ বলেন, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র্যালিতে পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন আহাম্মদ নিহতের ঘটনায়, তার বড় ভাই মিলন মিয়া বাদি হয়ে ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০০ জনকে আসামী করে সোমবার সকালে মামলাটি দায়ের করেন।