না.গঞ্জের গণসংলাপে সাকি, ‘জনগণ এদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায়’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের জনমানবের গণস্বার্থে কথা বলে। আমরা সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি, আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। আমাদের যে তরুণ ছাত্ররা ও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারও বলছে এদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। সেই বন্দোবস্ত হলো গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত। এই বন্দোবস্তের থাকবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি নাগরিক। এরপর সে হিন্দু মুসলমান বৈধ না খ্রিস্টান সেটা রাষ্ট্র দেখবে না।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক গণসংলাপের আয়োজন করেছে গণসংহতি আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটি। এসময় গণসংলাপে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি আরও বলেন, সরকার রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ, সেই সাথে সংসদ, বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যম রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এসবগুলো অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। স্থানীয় শাসন না স্থানীয় সরকারের ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। এদেশে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সাথে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার জবাব দিতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর কোন নির্বাহী বিভাগ প্রভাব রাখতে পারবে না, বিচার বিভাগ কে হতে হবে স্বাধীন। বিচারকদের জন্য আলাদা করা আইন করতে হবে। যাতে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ বিচার বিভাগের উপর না থাকে।
তিনি আরও বলেন, এখন সংসদে হচ্ছে সব হাত তোলা এমপি। কারন সংবেদনশীলতা থাকলে যে কোন বিল পাস। আর সম্ভবনিষ্ঠ দলনেতা যা বলবেন দলের সকল সংসদ সদস্যরা সেখানে হাত তুলবেন। না হলে তো সদস্যতা থাকবে না। দলের বিপরীতে ভোট দিলে মেম্বারশিপ বাতিল। সংসদের দুই পক্ষ করতে হবে যাতে সেখানে একটি ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। সেই সাথে সংখ্যানুপাতিক ভাবে নির্বাচন করতে হবে। এক ভোট পেলেই পাস, সম্পূর্ণ দেশ তার এটা হবে না। যাতে সকলের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে থাকতে পারে সেই জন্যই সংখানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। বিচার বিভাগ সংসদ সরকারের মাঝখানে যদি অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা, এবং ক্ষমতার ভারসাম্য করতে পারি তাহলে আপনার আমার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত থাকবে। তাহলে আর কেউ আপনার কলার টিপে ধরতে পারবে না। কিছু গণমাধ্যমকর্মীকে পয়সা দিয়ে মোশাহেব বানিয়ে, সম্পূর্ণ গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরেছে। ঐ মশার সাংবাদিকরা যারা তোকে তো অর্থে সাংবাদিকতা চর্চা করতে চায় তাদের গলা টিপে ধরছে। এভাবে আজকের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা গণমাধ্যম কেমন একটা জায়গা দেখতে চাই সেখানে, যদি নাগরিক অধিকার কেউ ছিনিয়ে নেয় তাহলে গণমাধ্যমে সবার উপর থেকে সত্য কথা বলতে পারে। গণমাধ্যমের উপর সকল ধরনের নিয়ন্ত্রণ বাতিল করতে হবে।
সাকি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে লাখ লাখো মামলা খুন হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। এটা কোন গণতন্ত্র ছিল না। আমরা এমন একটা গণতন্ত্র চাই যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা বাংলাদেশ পরিচালনা করলেও, সংখ্যালঘুরা যেন সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করতে পারে। তারা যেন মাথা উঁচু করে রাজনৈতিক চর্চা করতে পারে এবং সকল নাগরিক অধিকার পেতে পারে। এটা করতে হলে আমাদের ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। গতকাল শুনলাম আইন উপদেষ্টারা বলছেন সাইবার সিকিউরিটি আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা হবে। এই ছাতার মাথা বাতিল করার জন্য আমরা বহুদিন আবেদন করেছি। দুই লাইন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরে রাতার আঁধারে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এগুলো করা হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু আবু সাঈদ বুকে গুলি নিয়ে ভয়ের রাজত্বকে ফেলে দিয়েছে। এই বাংলাদেশ আর কোন ভয়ের রাজত্ব চলবে না।
সাকি আরও বলেন, গণতন্ত্রের দিকে আর কথা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার মর্যাদা রক্ষা। এটা ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতার সাথে সম্পর্কিত। আগামীর বাংলাদেশের যে নতুন গণতান্ত্রিক রি-পাবলিক হবে সেটা হবে নতুন সংবিধানের উপর দাঁড়িয়ে। সেই গণতান্ত্রিক সংবিধানে বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ক্ষমতার কেন্দ্রের জনগণনা থাকবে। ক্ষমতার প্রতিনিধিরা জনগণের অধীনে থাকবে। আর যারা সংখ্যাগরিষ্ঠরা রাষ্ট্র গঠন করবে সরকার পরিচালনা করবে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা দেখেছি যদি গণতন্ত্রের বৈষম্য থাকে তাহলে কিছু লোক লাখো কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। পাহাড় পরিমান সম্পদ নিজের নামে করে নেয়। এরপর তারা রাস্তাকে দখল করে ফেলে, নানাভাবে রাষ্ট্রের উপর নিচের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। এরপর ক্ষমতার ব্যবহার করে আরো ধন-সম্পদ বানাতে থাকে। একই পন্থা ব্যবহার করে শেখ হাসিনার সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। টাকা রাখার জন্য বাড়ি করেছে সেখানে মানুষ থাকে না টাকার বাড়ি করেছে। আজকের বাংলাদেশ আমাদের এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে এরকম বৈষম্য না থাকে। অর্থনীতিতে নেয়ও ইনসাফ কায়েম করতে হবে। জনগণের মাধ্যমে বৈষম্য থাকে তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম হতে পারবে না। প্রতি নাগরিককে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক ইউনিভার্সাল ওয়েলথ কার্ড পাবে, এবং রাষ্ট্র তার সুবিধা দেবে। প্রতিটি শিশু ১২ তম ক্লাস পর্যন্ত বিনামূল্যে রাষ্ট্রের অধীনে মানসম্মত শিক্ষা পাবে। হোস্টেল ছাড়া আমাদের তরুণরা যেন চাকরি পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আজ অনেকের বাসস্থান নেই কিন্তু এরা উন্নয়নের কথা বলে। এদের অট্টালিকা বড় বড় পাহাড় হয়, অথচ মানুষ ফুটপাথে ঘুমায়। বাংলাদেশের যদি এই ধরনের উন্নয়ন থাকে তাহলে গণতন্ত্র থাকবে না।