বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩, ২০২৪
Led01ধর্ম

মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবী দূর্গা দোলায় চড়ে আগমন, প্রস্থান করবেন ঘোটকে চড়ে

# দেড়’শ বছরের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জে টানা চতুর্থবার
# অপ্রীতিকর ঘটনা শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে: এসপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দেড়’শ বছরের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জে টানা চতুর্থবারের মতো কোনো পূজা মণ্ডপে আনুষ্ঠানিক ভাবে মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জে ভ্যাবাচ্যাকা সংগঠনের আয়োজনে ও আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবার ব্যতিক্রমধর্মী মহালয়ার আয়োজন করেছেন। ভোরে আমলাপাড়া শ্রী শ্রী লক্ষ্মী জনার্দ্দন বালা জিউর আখড়া মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে এই মহালয়ার আনুঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়।

মহালয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো দূর্গা পূজা। পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের শুরুর মহালয়া তিথিতে দেবী দূর্গা মত্তে আগমন করেন। অমবস্যার পরবর্তী তিথি প্রতিপদ থেকে শুরু হয় দেবী দূর্গার আরাধনা।

মহালয়া হলো পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। এর মাধ্যমে দুর্গাপূজা উৎসবের সূচনা হয়। দেবী দুর্গা এই দিন পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে দেবীমাহাত্ম্যম্ শাস্ত্র থেকে স্তোত্র পাঠ করতে মহালয়ার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে। মহিষাসুরমর্দিনী নামে পরিচিত গান এবং মন্ত্রগুলির শোনার জন্য প্রত্যেক বাঙালি পরিবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে। এটি দেবী দুর্গার জন্ম এবং অসুর রাজা মহিষাসুরের উপর তাঁর চূড়ান্ত বিজয়ের বর্ণনা দেয় । পিতৃপক্ষে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে ‘জলদান’ বা তর্পণ করা হয় এবং পরলোকগত পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা উলু দিয়ে চণ্ডীপাঠ ও বিশেষ পূজা-অর্চনা ও সাংস্কৃতির নৃত্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই মহালয়া পালন করা হয়। ভোরে মহালয়ার দেখে শত শত ভক্তরা এসে মন্দিরে ভীড় জমায়। দেবী দূর্গার অসুর বধ নাচ ও গানের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে ফুটিয়ে তোলা হয়। যা দেখে ভক্তরা আন্দদিত ও মুগ্ধ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ব্যতিক্রমধর্মী মহালয়া আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তারা এবং এই অনুষ্ঠানে যাতে প্রতিবারই হয় সেই প্রত্যাশা করেন। দেশ যাতে অশুভ শক্তি মুক্ত থাকে দেবী দূর্গার কাছে এই প্রার্থনাই করেন ভক্তরা।

বুধবার ২ অক্টোবর মহালয়ার শুরুর মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মনে পূজোর ভাব চলে আসছে। দেবী দূর্গা এবার দোলায় চড়ে আগমন করেছেন এবং প্রস্থানও করবেন ঘোটকে চড়ে। আগমন শুভ এবং প্রস্থান এবার অশুভ। এবার পূজায় প্রার্থনা থাকবে পৃথিবী ও দেশ থাকুক শান্তিময়। আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দেবীর দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর বিজয় দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই বর্ণিল উৎসব।

এবার দুর্গোৎসব উদযাপনে নারায়ণগঞ্জ জেলার মোট ২১৪ টি মন্ডপ তৈরী করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৬০ টি মন্ডপ ঝুঁকিপূর্ন বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ন এ মন্ডপগুলোতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করা হবে। উদাহরণস্বরূপ অন্যান্য সময়ে যেখানে একটি মন্ডপে ২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে রাখা হতো সেখানে এবার ৩ জন পুলিশসদস্য রাখা হবে। আমাদের তালিকা অনুযায়ি সারা নারায়ণগঞ্জে ২১৪ টি পূজা মন্ডপ আছে, সেখানে ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছি ৬০ টি। ঝুঁকিপূর্ন মন্ডপে নিরাপত্তা আরও কড়াকড়ি হবে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। মহালয়া থেকে প্রতীমা বিসর্জন পর্যন্ত পুলিশ, আনসার, স্ট্রাইকিং ফোর্স, অঙ্গীভূত আনসার, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সেনাসদস্যরা নিরাপত্তায় থাকবে।

এবার শারদীয় দুর্গোৎসব ৮ অক্টোবর মহাপঞ্চমী থেকে শুরু করে ১২ অক্টোবর দশমী পর্যন্ত চলবে দুর্গা পূজা। দশমীর দিনেই সিঁদুর খেলা ও বিসর্যনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

RSS
Follow by Email