রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Led01রাজনীতিসাহিত্য

না.গঞ্জে ফরহাদ মজহার ‘সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে গেছে, আরেকটা লড়াই শুরু হয়ে গেছে’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে ‘পাঠ চিন্তা’র আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পথ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েঠে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিবি রোডের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আলোচিত কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।

সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল রাকিবের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক সারোয়ার তুষার, সংগঠক ও চিত্র নির্মাতা মো. রোমেল, সন্ত্রাস নির্মল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি, পাঠ চিন্তা’র সংগঠক আফসার বিপুল, গোলাম রাব্বানী শিমুল, শাহীন মাহমুদ, হাসান জাফরুল বিপুল, কবির বিটু, অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ।

প্রধান অতিথি কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃ্ত্তির ইতিহাসে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান একটা অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হিসেবে লিখা থাকবে। এখানে আমরা সবাই এক হতে পেরেছি। এই অভ্যুত্থানে আমি থেকে আমরা হতে পেরেছি এটাই আমাদের প্রাপ্তি।

তিনি বলেন, বিএনপি বলে আমাদের নির্বাচন দেও, নির্বাচনেই গণতন্ত্র। কিন্তু নির্বাচনের সাথে গণতন্ত্রের কোন সম্পর্ক নাই। কারণ নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের চর্চা। এখন গণতন্ত্র আছে, আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করবো। তাই চর্চা করতে হলে গণতন্ত্রের সরকার নির্বাচন করতে হয়। সরকার নির্বাচনটা ভিন্ন প্রসেস। যেমন আমার রাষ্ট্র হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। জনগণের ইচ্ছায় শিল্পে, সাহিত্যে, লেখালেখিতে, সংবাদপত্রেসহ এই ধারণায় জনগণ যানে তারা কি ধরণের রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। আমরা চাই, আমরা কেমন রাষ্ট্র চাই এখানে ‘আমরা’। মানে হলো We the People, এই ‘আমরা’ হওয়ার বিষয়টা সহজে একটা জনগোষ্ঠির উপর আসে না। কারণ আমরা সকলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানুষ, আমরা বিচ্ছিন্ন, আমাদের চাহিদা আলাদা। এই যে জগৎটা, এটাকে আমরা সিভিল সোসাইটি বলি। এখানে আমরা একজন আরেকজনের প্রতিযোগী। এখানে অদ্ভুতভাবে সমাজটা বাহিরে থাকে। সমাজে আমার কামনা বাসনা জীবের যে চাহিদা, সেটা চরিতার্থ করার জন্য সমাজ যেমন আমার বাধা, তেমনি সমাজ আমার উপায় বটে। কারণ আমি তো সমাজের বাহিরে চাহিদা মেটাতে পারবো না। একদিকে আমি ব্যাক্তি, অন্য দিকে সমাজ আমার চাহিদা মেটাবার উপায়। এই হলো আমাদের সিভিল সোসাাইটির ব্যাখ্যা।

ফরহাদ মজহার বলেন, ১৯৭১ সালে ‘আমরা’ বলতে বুঝতাম আমার বাঙ্গালীরা যারা। ১৯৪৭ সালে ‘আমরা’ মানে হলো যারা মুসলমান ছিলাম। কিন্তু এবার (২০২৪) ‘আমরা’ মানে হলো যারা ফ্যাসিস্ট না। এবারের লড়াই আর ১৯৭২ সালের লড়ায়ের মধ্যে গুণগত পার্থক্য। এবারের ‘আমরা’ সুনিদ্রিষ্টভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এবারে ‘আমরা’ হলো তারা যাদের উপরে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা বন্দুকের নল তাক করে আছে। এবং আমরা ধরে নিয়েছি এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা প্রতীক শেখ হাসিনা। আমরা ব্যাক্তির পতন চেয়েছি, কারণ আমরা পুরোটা ধরতে পারছি না। এই ‘আমরা’ হয়েছিলো এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়। সে সময় এক দফা ছিলো। এবারও এক দফার দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু এবার সেটা হয় নাই। এবার ব্যাক্তি পদত্যাগ না আমরা একটা ব্যবস্থারও পরিবর্তণও চাই। কিন্তু এই ব্যাপারটা এখনো সমাজে পরিস্কার হয় নাই। ব্যবস্থার পতনটা কিভাবে করতে হয়, কিভাবে ঘটাতে হয় এটা আমাদের সমাজে পরিস্কার না। আমরা মনে করি হাসিনা চলে গেলো আমাদের কাজ হয়ে গেলো। আমরা মনে করি আমাদের কাজ হয়ে গেলো। এখানে যারা পুরোন ব্যবস্থা যারা টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা কিন্তু সেই সুযোগটা নিয়ে নিছে। পুরোন ব্যবস্থায় আমাদের উপদেষ্ঠারা শপথ নিলেন, তাদের শপথ ছিলো এই সংবিধান তারা রক্ষা করবে। তার মানে তারা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা রক্ষা করবেন বলে শপথ নিয়েছেন, এখন তাদের সরাবেন কিভাবে।

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এই ‘আমরা’ যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন সেটা কলা গাছ হলেও এটাই গণতন্ত্র। তাদেরকে কোন ভাবেই ফ্যাসিস্টদের সংবিধানে নেয়া যাবে না। আর এটাই বলেছি আমি বার বার। যেহেতু ঢুকে গেছে,তার মানে একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে গেছে। এটা কি ফিরিয়ে আনতে পারবেন? তাহলে তো আমাদের আরেকটা লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এই লড়াইয়ের প্রেক্ষিতেই কিন্তু আজকের এই সভা।

RSS
Follow by Email