না.গঞ্জের বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম-মুরগি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: মন্ত্রনালয়ের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম ও মুরগি। নির্দেশনা অনুযায়ি খুচরা পর্যায়ে প্রতিপিস ডিম (মুরগির লাল ডিম) ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি করার কথা থাকলেও নগরীর বড় বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকায় ও বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। ডিমের মতো নির্দেশনা মানছে না মুরগি ব্যবসায়িরা। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি খুচরা পর্যায় ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সায় বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ২৯০ টাকায়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে নগরীর দিগুবাবুর বাজার ও আশেপাশের এলাকা থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। বাড়তি দামে ডিম-মুরগি বিক্রি কারণ হিসেবে ব্যবসায়িরা নানা সিন্ডিকেটকে দোষ দিচ্ছেন। এদিকে মন্ত্রনালয়ের চিঠি দেওয়ার পরও নির্ধারিত দামে ডিম ও মুরগি ক্রয় করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ক্রেতারা।
ডিম কিনতে আসা মাহাবুব আলম বলেন, আগের সরকারের ২ ধরনের দাত ছিলো, একটা দেখানোর একটা খাওয়ার। তারাই ব্যবসায়িদের লাভ দিতে গিয়ে বিভিন্ন জিনিসের মূ্ল্য বাড়িয়ে দিতো। আবার কিছুদিন পর নাম মাত্র কিছু মূল্য কমাতো। আর যে দামটা কমানো হতো সেটা শুধু খবরের কাগজের হেড লাইনেই থাকতো। বাস্তবে কম দামে পেতাম না। এমনটা তেল, পেয়াজ, লবন নিয়েও হয়েছে। একই রকম এখন শুরু হয়েছে। তবে এখন যেহেতু নতুন সরকার তাদের তো আর পুরানোদের মতো কাজ করলে হবে না। মন্ত্রনালয় যে দাম নির্ধারণ করে দিসে সেটা খবরের কাগজে দেখেছি ৩-৪ দিন আগে। এখনো মাঠ পর্যায় দাম কমে নাই। ডিম মাঝখানে ১৭ টাকা করেও কিনেছি আমাদের এলাকার দোকার থেকে। সেটা হয়তো এখন ১৫ বা ১৪ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু সরকার তো বলেছে ১১ টাকা করে রাখতে, তাহলে আমরা কেন বেশি টাকা দিয়ে ডিম কিনবো।
আরেক ক্রেতা আসরাফ মিয়া বলেন, আগের মতোই সবকছিুর দাম বেশি। শুধু মুরগি না, সব কিছুর দাম বাড়তেসে। কোনটায় ২ টাকা বাড়ে কোনটায় ১০ টা, তবে দাম বাড়তেসে। এখনের সরকার চাইলেই সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারে। দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ও তাদের উচিত ছিলো বাজারে এই দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটার খবর নেওয়া। মোবাইল কোর্ট দিয়ে যারা বেশি দাম রাখে তাদের জরিমানা করা। শুধু দেশি বা সোনালী মুরগি না পাকিস্তানি কক, বয়লার, লেয়ার, খাশি মুরগিরসহ সব কিছুর দাম দোকানদাররা নিজের ইচ্ছে মতো রাখছে। আমরা দাম কমানো কথা বললে দোকানদাররা আমাদের বলে ‘ যেখানে কম পাইবেন সেইখানে থেকেই কিনেন’। খাদ্য তো আমাদের নিত্য দিনের বিশেষ প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেটা আমরাদের সবারই লাগে। তাই এই খাদ্যকে নিয়েই ব্যবসায়িরা গলাকাটা ব্যবসা করে।
দিগুবাবুর বাজারে ডিম বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, সরকার দাম কমিয়েছে আমরাও জানি কিন্তু আমরা তো খামারি না। আমরাও কারো কাছে থেকে ডিম কিনে তারপর এই বাজারে এসে বিক্রি করি। মুরগির লাল ডিম আমাদের কেনা হয় প্রতিপিস ১২ টাকা ৯০ পয়সা করে। সেখানে আমরা বিক্রি করি ১৩ টাকায়, সে হিসেবে হালি পড়ে ৫২ টাকা। দেশি মুরগির সাদা ডিমের দাম এখন প্রায় ২২ কাটা করে পড়ে, হালি বিক্রি হয় ৮৫ টাকা। সরকার যতোই দাম কমাক আমরা কম দামে আনতে পারলে তো কম দামে বিক্রি করতে পারবো।
মুরগি বিক্রেতা আজাদ হোসেন বলেন, মুরগির রেট প্রায় প্রতিদিনিই চেঞ্জ হয়। আমরা মুরগি আনি কাপ্তান বাজার থেকে। সেখানেই আজকের রেট অনুযায়ি সোনালী মুরগির আমাদের কেনা রেট পরে ২৭০ টাকা। এখন একটা মুরগি ঢাকা থেকে ২৭০ টাকায় কিনে নারায়ণগঞ্জ এনে সেটাকে কিভাবে ২৬৯.৬৪ টাকায় বিক্রি করি। আমাদের খরচ-চালান নিয়ে ২৯০ টাকা বিক্রি করতে হয়। একটা মুরগি খামার থেকে এই বাজারে আসতে ৪টা হাত বদল হয়। খামারের থেকে যায় পাইকারের কাছে, সেখান থেকে নিয়ন্ত্রন নেয় সিন্ডিকেট, তারপর যায় ডিলারের কাছে, পরে আমাদের কাছে। যদি সেই সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যায় তাহলে সরকার যে দাম নির্ধারন করুর সেই রেটে কাস্টমার কিনতে পারবে আমাদের ও লাভ হবে। এছাড়া আমাদের উপায় নাই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ সেলিমুজ্জামান বলেন, ডিম মুরগির দাম কমিয়ে তারা একটি চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে তো এখনো কোন চিঠি আসে নি। এখন চিঠি না আসলে কি দেখে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রন করবো। ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সকল পন্যের বাজার দেখে। মাছ, মাংশ, মুরগি ও ডিম এগুলো তো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আওতায়। সরকারি ভাবে আমাদের কাছে কোন চিঠি না আসায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।