শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
Led05জেলাজুড়েশিক্ষাসদর

যারা শিক্ষিত তারাই দুর্নীতি বেশি করছে: ড.রুমন রেজা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. রুমন রেজা বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত তৈরি করি, কিন্তু যারা শিক্ষিত হচ্ছে তারাই দুর্নীতি বেশি করছে, চুরি-চামারি অনিয়ম বেশি করছে। যারা কম শিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষ তারা দুর্নীতি করে না। সুতরাং দায়টা আমাদেরই বেশি। শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে জেগে উঠেছে, তারা বাংলাদেশকে একটি নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তারা যেভাবে বাংলাদেশ থেকেই নিতে চাচ্ছে সেটা দেখে আমরা নতুন আশাবাদী হয়ে আছি। এখন দেশ শিক্ষার্থীরা চালাচ্ছে, তাহলে তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় কলেজ রোড ডাক বাংলো অডিটোরিয়ামে ‘কেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষকদের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অধ্যক্ষ ড. রুমন রেজা।

সভায় তিনি আরও বলেন, তবে দুঃখজনক বিষয় হলো করোনার পর নানা কারণে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ডিসি অফিস যাচ্ছে শহীদ মিনারে বসে থাকছে ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা রকমের মন্তব্য করছেন তবে ক্লাসে উপস্থিত থাকছেন না। তাহলে আমরা কলেজ চালাবো কাকে নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ কলেজে সময়মতো গেট বন্ধ করে দেয় এবং গেট খুলে দেয় এজন্য অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করে এটা একটা কারাগার। হয়তো আমরা তাদের কাছে সে স্বতঃস্ফূর্ততা অর্জন করতে পারিনি, তাই তারা এটাকে জেলখানা মনে করছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরী একটি গোয়াল ঘরের মতো ছিল, আমি এটাকে একটি প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে ই-লাইব্রেরী বানিয়েছি। তবে এখানে কেউ বই পড়তে যায় না, যারা যায় তারা আড্ডা দেয়। কর্মমুখী ও সততা এগুলা আসলে চর্চার বিষয়। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে তবে সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশ কম। আমি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মনের মত করে করতে চাই তাহলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখী হতে হবে। এই কলেজ রোডে কলেজ চলাকালীন সময় যে কোচিং গুলো করানো হয় সেখানে কেউ কোন কলেজের শিক্ষক নয়। তারা কলেজের বাহিরের।

অধ্যক্ষ বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতির নানারকম রূপ দেখেছি, তবে আজকের এই আয়োজনে ছাত্র মজলিসের মতো সকল ছাত্র সংগঠন এসেছে এবং তারা তাদের মতবাদ ব্যক্ত করছে এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। ৮০-৯০ শতকের দিকে ছাত্র রাজনীতিতে বিভিন্ন দলা-দলি হানাহানি, কেউ কিন্তু সহ্য করতে পারে না এমন রূপ দেখেছি। তবে বর্তমান প্রজন্মের এই বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে এটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এখন ছাত্রদের মাঝখানে অন্যের মতামত গ্রহণ করার যে প্রবৃদ্ধি বা প্রেরণা গড়ে উঠেছে সেটা অসাধারন। আমরা যদি অন্যের মত গ্রহণ করি, নিজের মত অন্য কারো উপর চাপিয়ে না দেই, মিথ্যা না বলি বা অন্যায় না করি তাহলেই বাংলাদেশ পাল্টে যাবে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমার তো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করতে পারি তারা দায়িত্ব নেবে, নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বলবে যে ক্লাস চলাকালীন কেউ কোন কোচিং সেন্টার উপস্থিত থাকতে পারবে না। সবাইকে ক্লাসের সময় কলেজেই ক্লাস করতে হবে। তাহলে আমার মনে হয় শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হবে। যদি তোমার ক্লাস তোমার প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয়, তাহলে আমাদের সাথে বসো। আমরা আলোচনা করে তোমার ক্লাস, তোমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিয়ে যাবো। একটা শিক্ষক যখন কোন বিষয় আলোচনা করে, তখন সে ৪-৫ টা ক্লাস নিয়ে আলোচনা করে। তবে দেখা যায় যে শিক্ষার্থীরা একটা ক্লাসে আলোচনা করে, তারা পরের ক্লাসে উপস্থিত থাকে না। এটা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটা কমন সমস্যা। যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা শিক্ষার্থীদের উপলব্ধি করে ক্লাসে ফিরে আসতে হবে এবং কলেজ প্রশাসনকে সাহায্য করতে হবে।

ছাত্র ফেডারেশন জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনার সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় মত-বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সৈকত আরিফ; সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, সরকারি তোলারাম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মজিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মনোয়ার হোসেন, এবং ধর্মগঞ্জ ইসলামিয়া আরবিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল করিম সহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা।

RSS
Follow by Email